নারীদের কিডনি নষ্টের ৫টি প্রাথমিক সতর্কবার্তা!

আমরা সাধারণত শরীরের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপে বেশি নজর দেই। কিন্তু অনেক সময় চোখে না পড়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, কিডনি, নীরবে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে কিডনি সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণগুলো এত সূক্ষ্ম যে অনেকেই এগুলোকে ক্লান্তি, হরমোনজনিত পরিবর্তন বা মানসিক চাপের সঙ্গে মিশিয়ে ভুল বোঝে। অথচ এই ভুল বোঝাবুঝিই ভবিষ্যতে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির পথ খুলে দিতে পারে।

কিডনি শুধু শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে না, এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং রক্ত তৈরি করার প্রক্রিয়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে শরীরের প্রাথমিক সংকেতগুলোকে সঠিকভাবে বোঝা অত্যন্ত জরুরি। নারীদের ক্ষেত্রে এমন পাঁচটি লক্ষণ রয়েছে, যা দেখা দিলে সতর্ক হওয়া আবশ্যক।

চোখের নিচে বা গোড়ালিতে ফোলা সাধারণত রাতের ঘুম, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ বা বয়সজনিত পরিবর্তন হিসেবে ভাবা হয়। তবে যদি ফোলা বারবার হয় এবং বিশ্রামের পরও কমে না, তবে এটি কিডনির সংকেত হতে পারে। কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয় না, যার ফলে মুখমণ্ডল, পা বা গোড়ালি ফোলা দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত ক্লান্তি, যেন শরীর ভেঙে পড়েছে, নিয়মিত ব্যস্ত জীবনকে অনেকেই স্বাভাবিক মনে করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুমের পরও যদি শরীর চাঙা না হয়, তাহলে এটি শুধুই মানসিক চাপ নয়, কিডনির সমস্যারও ইঙ্গিত হতে পারে। কিডনি রক্তে লাল কণিকা তৈরিতে সাহায্যকারী হরমোন ইরিথ্রোপয়েটিন উৎপাদন করে। কিডনি দুর্বল হলে এই হরমোনের উৎপাদন কমে যায়, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পায় এবং দেখা দেয় অ্যানিমিয়া, যা গভীর ক্লান্তির অনুভূতি দেয়।

মূত্রের রঙ, গন্ধ বা ধরণে হঠাৎ পরিবর্তনও নজরে রাখা জরুরি। মূত্র আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যকে প্রতিফলিত করে। যেমন অতিরিক্ত ফেনাযুক্ত মূত্র, রাতে বারবার প্রস্রাবের চাপ, প্রস্রাবে রক্ত, অস্বাভাবিক গাঢ় বা ঘোলাটে রঙ, বা প্রস্রাবের সময় জ্বালা—এসব কিডনি সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।

মাঝরাতে হঠাৎ পেশিতে টান অনুভূত হলে সতর্ক হওয়া উচিত। জিম বা ব্যায়ামের পরে পেশিতে টান পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু রাতের ঘুমের সময় বা কোনো কারণ ছাড়াই পায়ের পেশিতে হঠাৎ টান পড়লে তা কিডনির ভারসাম্যহীনতার সংকেত হতে পারে। কিডনি শরীরের সোডিয়াম, পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম নিয়ন্ত্রণ করে, যা পেশির স্বাভাবিক কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ত্বক শুষ্ক বা চুলকানিময় হয়ে যাওয়াও একটি সতর্কবার্তা। কিডনি যদি বর্জ্য পদার্থ যথাযথভাবে বের করতে না পারে, তখন ত্বকেও তার প্রভাব পড়ে। ফলে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, রুক্ষ এবং চুলকানিময় হয়ে যায়। সাধারণ ময়েশ্চারাইজারে আরাম না পেলে এবং সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে কিডনি পরীক্ষা করানো জরুরি।

এই পাঁচটি লক্ষণ প্রাথমিক হলেও বারবার অবহেলা করা বিপজ্জনক। নারীরা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনে বেশি আক্রান্ত হন, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনির ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই বারবার ইউরিন ইনফেকশন বা পিঠের নিচের অংশে ব্যথা অনুভব করলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কিডনির যত্ন নেওয়া জটিল নয়। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান, রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের শরীরের প্রতি সচেতন থাকা। কিডনি নীরবে কাজ করে, কিন্তু বিপদে শরীরকে সংকেত পাঠায়। এই সংকেতগুলো বোঝা এবং সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়াই সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *