দুই দিনের জন্য সিলেটে বেড়াতে যাচ্ছেন? জেনে নিন কোনদিন কোথায় ঘুরবেন

অনেকেই দুই দিনের সফরে সিলেটে আসেন। কিন্তু এই স্বল্প সময়ে কোথায় কোথায় ঘুরবেন, তা নিয়ে দোলাচলে ভোগেন। তাঁদের জন্য আমাদের এই ভ্রমণ পরিকল্পনা।তার আগে বাহনের আলাপটা সেরে নেওয়া যাক। ব্যক্তিগত বাহন থাকলে তো কথাই নেই। না থাকলে দুই দিনের জন্য ভাড়া নিতে পারেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা মাইক্রোবাস। স্থানীয় বাহনেও যাতায়াত করতে পারেন।রাতে থাকার জন্য আগেভাগেই হোটেল–রিসোর্ট বুক করে এলে ভালো। সম্ভব না হলে সিলেটে নানা মানের হোটেল আছে, খোঁজখবর করে এক রাত থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন।

প্রথম দিন:

লালাখাল: জৈন্তাপুরের লালাখাল সিলেট শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার। লালাখাল নামে পরিচিতি পেলেও এই পাহাড়ি নদীর কেতাবি নাম সারী। বসন্তের এই সময়ে সারী নদীর বুকে থাকে পান্নাসবুজ পানি। পাহাড়কোলের নদীটির সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে। দুটি জায়গা থেকে নৌকায় আপনি সারী নদীর বুকে ঘুরতে পারেন। একটি সারীঘাট, অপরটি লালাখাল ঘাট। সময় ও খরচ বাঁচাতে সরাসরি লালাখাল ঘাটে যাওয়াই ভালো। নৌকায় ঘণ্টাপ্রতি ৫৫০ টাকা নেবে। নৌকায় ঘুরতে না চাইলে বালুময় খালের পাড় ধরে হেঁটে হেঁটেও লালাখালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

ডিবির হাওর:

শীতের শুরু থেকে বসন্তের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ডিবির হাওরে লাল শাপলার দেখা পাওয়া যায়। সহস্র লাল শাপলার পাশাপাশি ডিবির হাওরে গেলে পাহাড়ি পরিবেশ, পাখির কলতান আর জলজ উদ্ভিদের দেখা মিলবে।লালাখাল থেকে শাপলা বিল ১০ কিলোমিটার। নৌকায় ৫০০ টাকায় শাপলার রাজ্যে কাটিয়ে দিতে পারেন ঘণ্টা দুয়েক।

শ্রীপুর রাংপানি:

নৌকা থেকে নেমে সিলেট-তামাবিল সড়ক হয়ে ৮ কিলোমিটার গেলেই শ্রীপুর এলাকা। এখানেই আরেক বিছনাকান্দি রাংপানির অবস্থান। উঁচু পাহাড়ের গা বেয়ে পাথরের ওপর পানির ছলছল শব্দ আপনাকে বিমোহিত করবে। পাশেই খাসিয়াপল্পি। পল্লির ভেতর দিয়ে খাসিয়াদের সাজানো-গোছানো বাড়িঘর, জীবনযাপন ও পান–সুপারির বাগান দেখতে দেখতে যেতে পারবেন শ্রীপুর রাংপানির উৎসমুখে। যেখানে সোনারঙা পাথরে স্বচ্ছ পানিতে নিজেকে খানিক ভিজিয়ে নিতে পারেন।

শ্রীপুর লেক:

শ্রীপুর শুরুই হয়েছে চা-বাগান দিয়ে। সড়কের দুই পাশে চা-বাগান। চা-বাগানের কোলে শ্রীপুর শাপলা হ্রদ। পায়ে হেঁটে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জুতসই এক স্থান। পাশঘেঁষা খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়। পাথুরে নদ, পাহাড়-টিলা, চা-বাগান আর স্বচ্ছ জলরাশি—সবই এই শ্রীপুরে পেয়ে যাবেন।

জাফলং:

প্রথম দিনের শেষ গন্তব্য হতে পারে জাফলং। গোয়াইনঘাটের দর্শনীয় স্থানটিতে পৌঁছালে মনে হবে, প্রকৃতির অগণিত রূপ আপনাকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। জাফলংয়ে সোনাটিলা হয়ে হেঁটে যেতে পারবেন জিরো পয়েন্ট, সেখানে গেলে চোখে পড়বে দুই পাহাড়ের মাঝখানে ডাউকি সেতু। জিরো পয়েন্ট এলাকায় পিয়াইন নদে হরেক রঙের পাথরের ওপর হাঁটতে পারবেন। তবে এটা বর্ষার রূপ।বৃষ্টির অভাবে শীতে জৈন্তা-খাসিয়া পাহাড় কিছুটা মলিন থাকে। জাফলংয়ের মায়াবী ঝরনাও এই সময়ে পানিশূন্যতায় ভোগে। তখন যেতে পারেন পাশের খাসিয়াপল্লি ও পানপুঞ্জি।চাইলে দিনের শেষে পিয়াইন নদের উৎসমুখে গা ভাসিয়ে দিয়ে অবলোকন করতে পারেন আশপাশের দৃশ্য।

রাতারগুল:

সিলেট শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস বা ব্যক্তিগত বাহনে গোয়াইনঘাটের জলাবন রাতারগুলে যেতে এক ঘণ্টাও লাগে না। রাতারগুলের নাম মনে হলে মনের পর্দায় ভেসে ওঠে জলে ভাসা এক বন। এটা আসলে বর্ষার চিত্র।তবে রাতারগুল ‍শুধু বর্ষাতেই নয়, শীতেও সুন্দর। শীতের বনে খালগুলোতে নৌকা চলাচলের উপযোগী পানি থাকে। নৌকাভাড়া ৭৫০ টাকা।

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর:

রাতারগুল থেকে মূল সড়কে ফিরে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দূরে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের প্রথম পছন্দ এখন কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথর। ভারতের চেরাপুঞ্জি পাহাড়ের নিচে ধলাই নদের উৎসমুখে এই পাথরের সমারোহ। নদের বুকে পাথরের গায়ে স্বচ্ছ পানির কলকল শব্দ আপনাকে মুগ্ধ করবে।অনেকে রাতারগুল ভ্রমণের আগে সাদা পাথর ভ্রমণ করেন। কেউ আবার রাতারগুল ভ্রমণ শেষে সাদা পাথরে যান। এই ভ্রমণ নির্ভর করে সময় এবং নিজের সুবিধামতো।সাদা পাথরে পৌঁছাতে ভোলাগঞ্জের ১০ নম্বর ঘাট থেকে ৮০০ টাকা ভাড়ায় নৌকা নিতে হবে। এক নৌকায় ৮-১০ জন চড়ে যেতে পারবেন।

উৎমা ছড়া:

সাদা পাথরে খানিকটা সময় কাটিয়ে যেতে পারেন উৎমা ছড়ায়। রূপবৈচিত্র্যে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের জনপ্রিয় এই পর্যটনকেন্দ্রকে বলা যায় বিছনাকান্দির সখা। উঁচু উঁচু পাহাড়ের ভাঁজে সবুজের আস্তর। সেই সবুজ পাহাড়ের বুক বেয়ে নেমে এসেছে সরু ঝরনা। কলকল করছে শীতল স্বচ্ছ জলরাশি। সর্বত্র ছড়ানো হরেক রঙের পাথর। আকাশে কখনো ঘোলা মেঘ, কখনো নীলের ছায়া। উৎমা ছড়ায় পৌঁছে প্রথম দেখায় মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে আসে, আহ্, কী সুন্দর!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *