চট্টগ্রামে হৃদরোগের হার দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এর প্রধান কারণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যগত ভোজনরসিকতা এবং খাবারে অতিরিক্ত তেল ও ভাজাপোড়ার ব্যবহার, যা হৃদরোগের অন্যতম কারণ। চিকিৎসকরা বলেছেন, হৃদরোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হচ্ছে সচেতনতা ও প্রাথমিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা। ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং অতিরিক্ত মেদ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ সম্ভব।
তবে, চট্টগ্রামে হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল না থাকার কারণে সমস্যাটি আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও কিছু বেসরকারি হাসপাতাল হৃদরোগ চিকিৎসা প্রদান করছে, তবে খরচের কারণে অনেক গরিব ও অসহায় রোগী সেখানে চিকিৎসা নিতে পারছেন না। তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ। এই বিভাগে প্রায় সময় রোগী ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ, ত্রিগুণ ভর্তি থাকে, যার ফলে চিকিৎসকদের রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানাচ্ছে, সারা বিশ্বে হৃদরোগের কারণে প্রতি বছর মৃত্যুর সংখ্যা শতকরা ৩১ শতাংশ। আর বাংলাদেশের অবস্থাও খুব ভালো নয়, বিশেষত চট্টগ্রামে যেখানে এই হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের প্রধান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুর উদ্দিন তারেক আজাদী জানান, “চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, তবে রোগীদের চাপ কমানো সম্ভব হয়নি। আমাদের একমাত্র এনজিওগ্রাম মেশিনটি কিছুদিন আগে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ ছিল, যার ফলে সেবা ব্যাহত হয়েছে।”
তবে আশার কথা হলো, চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনে গত জুলাই থেকে ১০ শয্যার করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) চালু হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ২৩ শতক জমি বরাদ্দ পেয়েছে হার্ট ফাউন্ডেশন, যেখানে তারা ১৫০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এই হাসপাতালটিতে ক্যাথল্যাব, ওপেন হার্ট সার্জারি ইউনিট, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) এবং সিসিইউ থাকবে।
হার্ট ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ আজাদী জানিয়েছেন, “চট্টগ্রামে এখনও বিশেষায়িত হৃদরোগ হাসপাতালের অভাব রয়েছে, যা এই অঞ্চলের প্রায় ৪ কোটি জনগণের জন্য একটি বড় সমস্যা। বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন হলে কম খরচে আধুনিক হৃদরোগ সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।”
চট্টগ্রামের জন্য একটি বিশেষায়িত হৃদরোগ হাসপাতাল স্থাপন হলে এখানে হৃদরোগ চিকিৎসার সুবিধা অনেক বেশি বিকশিত হবে, এবং এতে সাধারণ মানুষও কম খরচে উন্নত চিকিৎসা সেবা লাভ করতে পারবে।