একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য ঠিক কতটা প্রোটিন প্রয়োজন, তা তাঁর ওজনের ওপর নির্ভর করে। ধরা যাক, একজনের ওজন ৫০ কেজি। তাহলে তাঁর জন্য প্রতিদিন ৫০ গ্রাম প্রোটিন দরকার। সহজে, সাধারণভাবে হিসাব করা যায় এভাবে—আপনার ওজন যত কেজি, প্রতিদিন তত গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে বলছিলেন ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান।
কোন খাবারে পাবেন প্রোটিন
যাঁর ৫০ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন, তিনি ৫০ গ্রাম মাংস খেলেই যে তাঁর দেহের চাহিদা মিটে যাবে না, সে তো বুঝতেই পারছেন। কারণ, কোনো খাবারই কেবল একটি পুষ্টি উপাদান দিয়ে তৈরি নয়। প্রতিটি খাবার থেকেই নানা পুষ্টি উপাদান পাই আমরা। আবার সব প্রাণীর মাংস থেকে যে একই পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়, তেমনটাও নয়। তেমনিভাবে বিভিন্ন ধরনের মাছ, ডিম ও দুধের প্রোটিনের পরিমাণও আলাদা হয়। এসবের বাইরেও উদ্ভিজ্জ উৎস, যেমন ডাল, সয়া, তোফু, বাদাম ও অন্যান্য বীজ থেকে প্রোটিন পাওয়া যায়।
প্রাণিজ প্রোটিন সবচেয়ে বেশি জরুরি বাড়ন্ত বয়সে এবং অন্তঃসত্ত্বা নারী ও স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে অধিকাংশ প্রোটিন গ্রহণ করলে ক্ষতি নেই। তবে কোন খাবার থেকে ঠিক কতটা প্রোটিন পাবেন, তা কড়ায়–গন্ডায় হিসাব করা সবার জন্য জরুরি নয়; বরং সুষম খাদ্যভ্যাস গড়ে তোলার প্রতি জোর দেওয়া প্রয়োজন। তবে নির্দিষ্ট রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অবশ্য এই হিসাব-নিকাশটাই জরুরি হয়ে দাঁড়ায়, সেই হিসাব করে তৈরি করা খাদ্যতালিকাই তাঁদের মেনে চলতে হয়।
পর্যাপ্ত প্রোটিন না পেলে
প্রোটিন আমাদের দেহের রোজকার ক্ষয়পূরণ করে। শক্তিও জোগায়। সার্বিক সুস্থতার জন্যই প্রোটিন আবশ্যক। পর্যাপ্ত প্রোটিন না পেলে দেহে কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন—প্রায়ই জীবাণু সংক্রমণ হওয়া, সহজে ক্ষত নিরাময় না হওয়া।অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বল অনুভব করা, পর্যাপ্ত খাবার খাওয়ার পরও ক্ষুধা অনুভব করা।চুল ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, চুলের গঠন পাতলা হয়ে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়া।নখ ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, নখের ওপর খাঁজ সৃষ্টি হওয়া।পায়ে পানি আসা। পেশিক্ষয়, ওজন কমে যাওয়া।
যা করবেন
এ ধরনের উপসর্গ অনেক কারণেই দেখা দিতে পারে। পায়ে পানি আসা, পেশিক্ষয় বা ওজন কমে যাওয়ার মতো সমস্যার ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমে সুষম খাদ্যাভ্যাসের প্রতি গুরুত্ব দিন। প্রোটিন ও প্রয়োজনীয় অন্য সব উপাদান গ্রহণ করতে চেষ্টা করুন খাবার থেকে। তাতে উপকার না মিললে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারণটি খুঁজে বের করবেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেবেন।