অতিধনীরা কি বেশি সুস্থ থাকে

সুস্থতার জন্য শরীর ও মনের যত্ন নেওয়া চাই ঠিকঠাক। এর জন্য কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, তা জানা খুবই জরুরি। পুষ্টিকর খাবারের দাম বাড়লে দরিদ্র মানুষের পক্ষে তা কেনা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে বহু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে সহজে। কড়া রোদে কঠোর পরিশ্রম করতে গিয়ে শ্রমজীবী মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। অন্যদিকে সম্পদশালী ব্যক্তিদের জীবনে এসব সমস্যা নেই। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা ভাবতে হলেও খানিকটা সম্পদের প্রয়োজনীয়তার কথা অস্বীকার করা যায় না। সুস্থতার জন্য কি তাহলে সম্পদ আবশ্যক? এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান।

সচেতনতাই মূল কথা

সুস্থতার জন্য সম্পদের প্রাচুর্য নয়, চাই সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা। উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা ব্যাখ্যা করা যাক। হাতের মাধ্যমে যেসব রোগ ছড়ায়, তা প্রতিরোধে আপনাকে জানতে হবে, কোন কোন সময় সাবান ব্যবহার আবশ্যক। আপনি কত দামি সাবান ব্যবহার করলেন, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। জিমে না গিয়েও আপনি দিব্যি ফিটনেস ধরে রাখতে পারেন, যদি অন্য কোনো উপায়ে শরীরচর্চা করেন। বিভিন্ন খাদ্যের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানা থাকলে আপনি দামি খাবার না খেয়েও পুষ্টির বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারবেন। এ বিষয়ে আপনি যেমন একজন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জানতে পারবেন, তেমনি একটি নির্ভরযোগ্য উৎস থেকেও অনেকটা জানা সম্ভব।

বিলাসী জীবনেরও আছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

সম্পদশালী মানুষেরা বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়তে পারেন। সুস্বাদু, কিন্তু অধিক ক্যালরিসম্পন্ন খাবার বেশি খেতে পারেন তাঁরা। প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের প্রবণতা থাকতে পারে। বহু নেমন্তন্নও রক্ষা করতে হতে পারে। অধিকাংশ সম্পদশালী মানুষের কায়িক শ্রমও করা হয়ে ওঠে না। ব্যক্তিগত গাড়িতে গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার ফলে সামান্য হাঁটার প্রয়োজনটুকুও থাকে না। ঘরের কাজে সহায়তাকারী থাকার কারণে ঘরেও অলস সময় কাটাতে পারেন তাঁরা। সব মিলিয়ে দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে তাঁদের। শৈশব থেকে অতি সম্পদশালী হিসেবে বেড়ে ওঠার আরও একটা নেতিবাচক দিক আছে। একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতর অতিরিক্ত যত্নে বেড়ে উঠতে থাকা শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম হতে পারে।

সম্পদের সঙ্গে আছে চাপও

আপাতদৃষ্টে সম্পদশালীদের বেশ সুখী মনে হলেও অতিরিক্ত সম্পদের কারণে মানসিক চাপও সঙ্গী হতে পারে। সম্পদ সামলানোর বাড়তি দায়িত্ব থাকে। সম্পর্কগুলোতেও স্বার্থের সংঘাত দেখা দিতে পারে। কখনো মনে হতে পারে, কেবল স্বার্থের জন্যই হয়তো কেউ বন্ধুর বেশে জীবনে এসেছেন। অতি ব্যস্ততার জন্য সঙ্গী এবং সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে। নানামুখী মানসিক চাপের কারণে ঘুম কম হতে পারে। বাড়তে পারে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের ঝুঁকিও।

শেষ কথা

স্বাস্থ্যই সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আর্থিক দিক থেকে খুব সচ্ছল না হলেও সুস্থ থাকার উপায় আপনি জানতে পারবেন অনেকভাবেই। নিজের এবং পরিবারের সুস্থতার ব্যবস্থাও করতে পারবেন সহজসাধ্য উপায়ে। সম্পদ বেশি থাকুক কিংবা কম, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখতে পারাই মূল কথা। নইলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন যে কেউই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *