বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আজ সোমবার সকাল থেকে কর্মবিরতিতে গেছেন, যার ফলে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ধর্মঘটের অংশ হিসেবে দুপুরে হাসপাতালের প্রধান ফটকে মানববন্ধন করেন চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, অনেক রোগী চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন, কেউ কেউ ভর্তি হওয়ার পরেও ফলোআপের অভাবে হাসপাতাল ত্যাগ করছেন। বাকেরগঞ্জের জাকির তালুকদার (৬৫) বলেন, “অসুস্থ শরীরে ভর্তি হতে এসেছিলাম, কিন্তু ধর্মঘটের কারণে ফিরে যাচ্ছি।” পিরোজপুরের নাজমুন নাহার জানান, “সকালে একজন চিকিৎসক এলেও এরপর কেউ আসেননি।”
মহিলা মেডিসিন ইউনিট-৩-এর ইনচার্জ নার্স আখিরুন্নেসা বলেন, “ইন্টার্ন চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলোআপ দিতে সমস্যা হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, ইউনিটে আজ রোগী সংখ্যা ৬১, যা শনিবার ছিল ১২৪ জন।
হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, এখানে ১৫০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক রয়েছেন, যারা রোগীদের ২৪ ঘণ্টা ফলোআপ সেবা দিয়ে থাকেন। তাদের অনুপস্থিতিতে রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
মেডিসিন ইউনিট-৩-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. ইমরান হোসেন জানান, “ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভাবে চিকিৎসার মানে প্রভাব পড়েছে। নিয়মিত চিকিৎসকদের ওপর চাপ অনেক বেড়ে গেছে।”
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, আপাতত নিয়মিত চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসাসেবা চালানো হচ্ছে, তবে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও রোগী ও স্বজনদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বিরাজ করছে। বহির্বিভাগে আংশিক সেবা অব্যাহত থাকলেও অন্তর্বিভাগে চিকিৎসা কার্যক্রমে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, বরিশালে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের দাবিতে ২১ দিন ধরে আন্দোলন চলছে। গতকাল আন্দোলনকারীদের একটি মিছিল হাসপাতালের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ বাধা দেয়, এ সময় সংঘর্ষে একজন চিকিৎসক, দুই কর্মচারী এবং একজন রোগীর স্বজন মারধরের শিকার হন। এরই প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আজ ধর্মঘটে যান এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দেন। অন্যদিকে, নিয়মিত চিকিৎসকরাও ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে গ্রেপ্তার না হলে কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।