বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনের পাশাপাশি এবার বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
আজ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের মহাসড়কে বসে অবরোধ শুরু করেন। এতে সারা দেশের সঙ্গে দক্ষিণের জেলাগুলোর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। মহাসড়কের দুই পাশে অনেক যানবাহন আটকা পড়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। রাত নয়টার দিকে অবোরধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
এর আগে সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আকস্মিক আমরণ অনশনের কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এরপর রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-১–এর নিচে তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করেন। আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময়সীমা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে যোগযোগ না করায় সময়সীমা বাড়িয়ে সাড়ে চারটা পর্যন্ত নির্ধারণ করেন। কিন্তু এ সময়সীমার মধ্যেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ না করায় তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করে বিকেল পাঁচটায় মহাসড়কে বসে পড়েন এবং অবরোধ করেন। এ সময় বিক্ষোভে আন্দোলনকারীদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন শিক্ষার্থী সুজয় শুভ, শহিদুল ইসলাম ও মোশারফ হোসেন।
তবে সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় লিংকার্স’–এ রাত ১০টায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ঘোষণা দিয়েছিলেন উপাচার্য শুচিতা শরমিন। তাঁর এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে গত রাতে আকস্মিক সংবাদ সম্মেলন করে আমরণ অনশন শুরুর ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের অপসারণ ও ‘পাতানো’ সিন্ডিকেট সভা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তাঁর বাসভবনের ফটক ভাঙচুর করে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর ১৩ এপ্রিল উপাচার্যের নির্দেশে তৎকালীন রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ এপ্রিল অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে পুনর্বহাল, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণসহ চার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা রেজিস্ট্রারকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ দাবি করে কুশপুতুল দাহ করেন এবং রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কে এম সানোয়ার পারভেজ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০–১২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ৩ মে ঢাকায় সিন্ডিকেট সভায় মনিরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। পরদিন ৪ মে উপাচার্য শুচিতা শরমিন সংবাদ সম্মেলন করে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা মুচলেকা দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও জিডি প্রত্যাহারের আশ্বাস দেন উপাচার্য। সেই সঙ্গে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন তাঁর সিন্ডিকেট সদস্যপদে পুনর্বহালের বিয়ষটি নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ায় এ বিষয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার হবে বলে জানান উপাচার্য।এ ছাড়া সিন্ডিকেট সভায়, ফ্যাসিবাদী সরকারের সমর্থক, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের চিহ্নিত ও ব্যবস্থা নিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে অবহিত করেন উপাচার্য। এরপর ওই দিন দুপুরে আন্দালনরত শিক্ষার্থীদের ওই অংশ পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবির আন্দোলনের ঘোষণা দেন। তাঁরা প্রশাসনিক ভবন ও উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।