চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত দুই শিক্ষার্থী—ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম এবং মামুন মিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সায়েম ছয় দিন পর জ্ঞান ফিরেছেন, এবং মামুন মিয়া, যিনি মাথার খুলির একটি অংশ হারিয়েছিলেন, বর্তমানে হাঁটাচলা করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে মামুনের হাঁটাচলার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
মামুনের মামা, নাজমুল তালুকদার, জানান যে ছবিটি ছড়িয়ে পড়ায় তারা বিব্রত হয়েছেন। তার মতে, ‘‘একজন গুরুতর আহত ব্যক্তি কীভাবে এত সহজে হাঁটাচলা করছে’’—এই প্রশ্ন উঠছে। তবে তিনি এই বিষয়টিকে চিকিৎসার একটি অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন এবং জানান, ‘‘হাঁটাচলা করানো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যা রুমের ভেতরে করা হলেও ছবি ছড়িয়ে পড়লে বিতর্ক সৃষ্টি হতো না।’’
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, আতিয়ার রহমান, চবির আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে গিয়ে মামুনকে হাঁটতে দেখেন এবং তার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। তিনি লিখেন, ‘‘কিছুক্ষণ আগে পার্কভিউ হাসপাতালে এলাম আহতদের দেখতে। আলহামদুলিল্লাহ, মামুন হাঁটছে, ছোট ছোট কথা বলছে, অপারেশনে অংশ নেওয়া নিউরোসার্জন তাকে হাঁটালেন।’’
পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা চিকিৎসক ডা. এটিএম রেজাউল করিম জানান, ‘‘সায়েমের অবস্থা উন্নতির দিকে রয়েছে, তার কনশাস লেভেল এখন ১৪ থেকে ১৫ এর মধ্যে রয়েছে।’’ রোববার তার চিকিৎসকদের মেডিকেল বোর্ড তাকে মুখে খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মামুন মিয়ার ছবি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ডা. রেজাউল করিম বলেন, ‘‘মামুনকে হাঁটাচলা করানো চিকিৎসার একটি অংশ। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিটি আপলোড হওয়ায় সমালোচনা হতে পারে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা যখন সায়েম এবং মামুনকে হাসপাতালে নিয়ে আসি, তখন তারা প্রায় মৃত ছিলেন। আমরা তাদের রেফার না করে সাহসিকতার সাথে চিকিৎসা দিয়েছি।’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন তারা দ্রুত উন্নতি করছে, অথচ যদি সমালোচনা হয়, তাহলে চিকিৎসকদের উৎসাহ কমে যাবে।’’
ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র এবং মামুন সমাজতত্ত্ব বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। তারা গত ৩১ আগস্ট থেকে পার্কভিউ হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সায়েমের মায়ের বরাত দিয়ে তার সহপাঠী তৌহিদুল ইসলাম তানভীর জানান, ‘‘শনিবার মেডিকেল বোর্ডের উপস্থিতিতে সায়েমের লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি এখন স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছেন এবং রোববার তার পরিবারকে চিনতে পেরেছেন।’’ সায়েম তার মা, বাবা এবং ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বলেছিলেন, ‘‘হামলাকারীরা আমাকে কুকুরের মতো মেরেছে।’’ এই কথা শুনে সায়েমের মা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এটি জানানো গেছে যে, ৩০ আগস্ট রাতে চবি ক্যাম্পাসের ২ নাম্বার গেট এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ও স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরে ৩১ আগস্ট পুরো দিনজুড়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়, যাতে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে তিনজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাদের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল, এবং একজনকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।