চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিয়োগ-বাণিজ্যের জমিদার’ নামকরণে প্রতিবাদ, উপাচার্য ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ‘নিয়োগ-বাণিজ্যের জমিদার’ নাম লেখা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার বেলা ৩টার দিকে পূর্বঘোষিত ‘দেয়াললিখন এবং গানে ও কবিতায় প্রতিবাদ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা এই নাম লেখেন। অভিযোগ রয়েছে, এ সময় সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মো. কোরবান আলী শিক্ষার্থীদের বাধা দেন এবং হুমকি প্রদান করেন।

বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইয়াহ্‌ইয়া আখতার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দুই শিক্ষার্থীর পরিচয় জানার পর তাঁদের অভিভাবককে ডেকে আনার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের দাবি:
শিক্ষার্থীরা গতকাল ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে সাত দফা দাবি জানান। তাদের মধ্যে প্রধান দাবিগুলি হলো- আহতদের মানসম্মত চিকিৎসা, ক্যাম্পাসে নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা, হামলার ভিডিও প্রকাশকারীদের নিরাপত্তা, প্রকৃত অপরাধীদের বিচার, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বয় কমিটি গঠন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ। এসব দাবি আদায়ে আজ তারা দেয়াললিখন কর্মসূচি চালিয়ে গেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশা দে বলেন, তারা প্রশাসনিক ভবনের নাম পরিবর্তন করে ‘নিয়োগ-বাণিজ্যের জমিদার ভবন’ লিখেছেন, কারণ তারা লক্ষ্য করেছেন যে, যখন ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ চলছিল, তখন প্রশাসনিক ভবনে নিয়োগ কার্যক্রম চলছিল, যা প্রশাসনের উদাসীনতাকে তুলে ধরে।

অভিযোগের ব্যাপারে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মো. কোরবান আলী বলেছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের শুধু কাজটি থামাতে বলেছিলেন এবং কোনো হুমকি দেননি। তবে শিক্ষার্থীরা জানান, তিনি তাদের হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

এদিকে, উপাচার্য ইয়াহ্‌ইয়া আখতার দুই ছাত্রীকে ডেকে আইডি কার্ড চেয়ে পরিচয় জানতে চান। এক ছাত্রী অভিযোগ করেন, তিনি তখন উপাচার্যকে বলেন যে, তার পরিবার ৪০০ কিলোমিটার দূরে থাকে, তবে উপাচার্য তার অভিভাবকদের ডেকে চা খাওয়ানোর কথা বলেন, যা তাকে হুমকি মনে হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, “আইডি কার্ড মানে একজনের পরিচয়। আমি তোমাদের পরিবারকে ডেকে তাঁদের সন্মান জানাব। যদি প্রমাণ না দিতে পারো যে আমরা নিয়োগ-বাণিজ্য করেছি, তাহলে তোমাদের অভিভাবকদের ডেকে আনা হবে।”

রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সেকশন কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ
এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি তিনি গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছেন, যেখানে ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের সময় তার মন্তব্য করা হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পর্যালোচনা করার জন্য তাকে তিন দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

সংঘর্ষের ঘটনা
গত শনিবার রাত থেকে রবিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় জোবরা গ্রামবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ২২০ জন আহত হন, যার মধ্যে ২০০ জন শিক্ষার্থী। তিন শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর, একজন বর্তমানে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা করেছে এবং পুলিশ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

সামগ্রিক পরিস্থিতি
এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করেছেন এবং প্রশাসনের নির্লিপ্ত মনোভাবের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *