খাগড়াছড়িতে ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তারির দাবিতে সড়ক অবরোধ, উত্তপ্ত পরিস্থিতি

খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার সকালে শুরু হওয়া এই অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ির সাথে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়, পাশাপাশি জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

অবরোধকারীরা খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় পিকেটিং করে গাছের গুঁড়ি ফেলে, টায়ার ও গাছ পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। এ সময় পুলিশ সড়ক থেকে এসব অপসারণ করলেও পৌর শহরের মধ্যে ইজিবাইক, টেক্সি ও মোটরসাইকেল চলাচল করেছে।

অবরোধের পর দুপুর দেড়টার দিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং খাগড়াছড়ি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স এলাকায় বাঙালি জনগণের সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর পরেই জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তবে, ১৪৪ ধারা জারির পরও প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে খাগড়াছড়ি মহাজনপাড়া এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি একসাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ সময় খাগড়াছড়ি পুলিশের সুপার মো. আরেফিন জুয়েল জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক ছিল, তবে দুপুরের পর থেকে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তিনি বলেন, “ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে উত্তেজিত দুই পক্ষকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং নতুন সহিংসতার ঘটনা এড়াতে আমরা কাজ করছি।”

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

এই সহিংসতায় মোট ২৩ জন আহত হয়েছেন, এদের মধ্যে ২১ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, এবং দুইজন খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

অবরোধের কারণে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন সাজেকগামী প্রায় তিন হাজার পর্যটক। খাগড়াছড়ির সাথে সাজেকের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় তারা আটকা পড়েছেন। অনেক পর্যটক সন্ধ্যা পর্যন্ত খাগড়াছড়িতে ফিরতে পারেননি এবং তারা দীঘিনালায় অবস্থান করছেন। সাজেক যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা হাজারখানেক পর্যটকও খাগড়াছড়িতে আটকা পড়েছেন।

এই ঘটনা শুরু হয় মঙ্গলবার রাতে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের পর। ভিকটিমের পিতা অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা করেন। এর পরদিন বুধবার সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ শয়ন শীল (১৯) নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে, কিন্তু দুই আসামি এখনও পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে জুম্ম ছাত্র-জনতা শুক্রবার সকালে নিপীড়ন বিরোধী সমাবেশ করে এবং সমাবেশ থেকে সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়, যা শনিবার বাস্তবায়িত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *