যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার আশঙ্কায় নিকোলাস মাদুরো সরকার যেখানে টানটান উত্তেজনায়, সেখানে সাধারণ ভেনেজুয়েলাবাসীর দৈনন্দিন চিন্তা ঘোরে খাবার আর টাকার হিসাবকে ঘিরে—বলছে বিবিসি মুন্ডোর বিশেষ প্রতিবেদন।
বুধবার সকালে রাজধানী কারাকাসের জনপ্রিয় কুইন্তা ক্রেসপো বাজারে এমনই দৃশ্য। সম্ভাব্য উত্তেজনা বা মার্কিন হুমকি নয়, বরং পকেটে থাকা অল্প টাকায় দিনের বাজারটা হবে কি না—সেটাই তাদের বড় দুশ্চিন্তা।
সবজিবিক্রেতা আলেহান্দ্রো ওরেল্লানো বিবিসিকে বলেন, “হামলা-টামলা কিছুই হবে না। আসল সমস্যা ডলারের দাম বাড়া।” তিনি হাতে কফি নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে বলেন, “দেখুন, দোকানপাট কত ফাঁকা।”
এদিকে গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র হাজারো সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম ভেনেজুয়েলার কাছাকাছি মোতায়েন করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজও যুক্ত হয়েছে এই বহরে। মার্কিন বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ গত শুক্রবার বাড়তি সামরিক তৎপরতার কথা জানিয়ে সতর্কতা জারি করার পর অন্তত চারটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন দেশটিতে ফ্লাইট বাতিল করে।
মার্কিন প্রশাসন দাবি করছে, মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ক্যারিবিয়ান ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ৮০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। তবে মাদুরো বলছেন, এসব চাপ তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই দেওয়া হচ্ছে।
কারাকাসের রাস্তায় এদিনও জীবনযাত্রা স্বাভাবিক। তবে মানুষের সাধারণ শত্রু—অতিরিক্ত খাদ্যমূল্য ও দুর্বল ক্রয়ক্ষমতা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানাচ্ছে, এ বছর বলিভারের মূল্য ৮০% কমে যাবে।
এক কেজি মুরগির মাংসের দাম সরকারি ন্যূনতম মাসিক বেতনের চার গুণ। বিভিন্ন বোনাস পেলেও নিত্যপণ্যের ঝুড়ি ভরতে তা যথেষ্ট নয়।
৭৪ বছর বয়সী কনসুয়েলো বিবিসিকে বলেন, “যা হওয়ার হবে। যুদ্ধ নিয়ে বেশি ভাবলে অসুস্থই হয়ে যাবো। পকেটে টাকা নেই, কীভাবে খাবার মজুদ করবো?”
দুই অর্থনীতিবিদ মন্তব্য করতে রাজি হননি সরকারি প্রতিশোধের ভয়ে। আরেক বিশেষজ্ঞ জানান, মাসিক মুদ্রাস্ফীতি এখন প্রায় ২০%। আইএমএফ বলছে, এ বছর দাম বাড়বে ৫৪৮%—আর ২০২৬ সালে তা ৬২৯% ছাড়াতে পারে, যা লাতিন আমেরিকার সর্বোচ্চ।
অনেকেই গোপনে চান যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে সরকার পরিবর্তন হোক, কিন্তু ভয় তাদের চুপ করে রেখেছে। বলিভারের সিউদাদ বোলিভার শহরের এক ব্যবসায়ী ফোনে জানান, “আমরা ভয় পাই। কিছু পোস্ট করাও এখন ঝুঁকির। সবাই ঘরে ঘরে কথা বলে, বাইরে নয়।”
২০২৪ সালের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর বিক্ষোভকারীদের দমনে ২,০০০-এর বেশি মানুষকে আটক করা হয়। বর্তমানে রাজনৈতিক কারণে ৮৮৪ জন কারাবন্দি বলে জানায় মানবাধিকার সংগঠন ফোরো পেনাল।
অনেকে মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরের উপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। চিকিৎসা ল্যাবকর্মী এসথার গেভারা বলেন, “আমি চিন্তায় আছি। জানি না কী হতে যাচ্ছে। মানুষ ভাবে কিছু হবে না, কিন্তু ব্যাপারটা গুরুতর। নিরীহ মানুষ মরতে পারে।”
দুপুরে কারাকাসের ব্যস্ত রাস্তায় দৈনন্দিন জীবন থেমে নেই। ৫৭ বছরের হকার জাভিয়ের হারামিলো বললেন, “আক্রমণ হবে বলে মনে হয় না। আলোচনায় কিছু হতে পারে।”
তবু তিনি বলেন, “লোডশেডিং হলে মনে হয়—এল কি? ঢুকে পড়লো নাকি?”
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি মাদুরোর সঙ্গে আলোচনায় রাজি আছেন, তবে সামরিক হামলার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।
জাভিয়েরের কথায়, “আমরা খাবার নিয়ে বেশি চিন্তিত। ভেনেজুয়েলার অবস্থা খুবই খারাপ। মুদ্রাস্ফীতি আমাদের খেয়ে ফেলছে।”