একটি আবাসিক হোটেলে ২৮ বছর বয়সী নারী চিকিৎসকের মৃত্যু ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্কের মাঝে নতুন করে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ পেয়েছে। এতে দেখা গেছে-সেই নারী আত্মহত্যার দিন রাতের বেলায় একাই হোটেলে প্রবেশ করেন। এই ভিডিও কিছু রাজনৈতিক মহলের উত্থাপিত ‘খুনকে আত্মহত্যা হিসেবে চালানো হয়েছে’-এমন দাবি খণ্ডন করছে।
২৩ অক্টোবর রাতে নিজের হোটেল কক্ষ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মুম্বাইয়ের সরকারি হাসপাতালে কর্মরত এই চিকিৎসকের হাতের তালুতে লেখা আত্মহত্যার নোটে দুইজনকে দায়ী করা হয়। তারা হলেন পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর (পিএসআই) গোপাল বদানে ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার প্রশান্ত ব্যাংকার। বদানে-ব্যাংকার দুজনকেই ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খবর এনডিটিভির।
হোটেল মালিক ফুটেজটি স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তুলে দিয়েছেন। তাতে দেখা যায়-লক্ষ্মী পূজার অনুষ্ঠান শেষে ব্যাংকারের বাসা থেকে বের হয়ে চিকিৎসক নিজেই হোটেলে এসে চেক-ইন করেন।
শিব সেনা (উদ্ধব বলাসাহেব ঠাকরে) নেত্রী সুশমা অন্ধারে প্রশ্ন তুলেছিলেন-তিনি কি স্বেচ্ছায় হোটেলে গিয়েছিলেন, নাকি বাধ্য করা হয়েছিল? এর জবাবে হোটেল মালিক বলেন—‘তার সঙ্গে কেউ ছিল না, তিনি একাই এসেছিলেন।’
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে-লক্ষ্মী পূজার সময় ব্যাংকারের সঙ্গে তার ছবিকে ঘিরে বাকবিতণ্ডা হয়। তিনি রাগ করে বেরিয়ে গেলে ব্যাংকারের বাবা তাকে ফের বাড়িতে আনেন। পরে আবার তিনি বেরিয়ে হোটেলে ওঠেন।
নিজেকে বিপর্যস্ত উল্লেখ করে মোবাইলে ব্যাংকারকে একাধিক (এসএমএস) বার্তা পাঠান তিনি। আরও জানা গেছে-মধ্যরাতের দিকে ব্যাংকারকে ফোনও করেছিলেন, তবে তিনি ধরেছিলেন কি না তা নিশ্চিত নয়।
পরদিন সকালে হোটেল কর্মীরা তার ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখতে পান। ময়নাতদন্তে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার ইঙ্গিত মিলেছে। হাতে লেখা নোটে বদানে-কে একাধিকবার যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করা হয়েছে। ব্যাংকারের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে-ভুক্তভোগী আগেও বদানে ও কিছু পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগ-তার কাছ থেকে অপরাধীদের ‘ভুয়া মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট’ দিতে চাপ দেয়া হতো। সেই অভিযোগ উল্টো তার বিরুদ্ধেই মামলা হয়ে যায়।
নারী কমিশন জানতে চেয়েছে-তার অভিযোগ তদন্তে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ঘটনাকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা’ বলেছেন। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস সতর্ক করেছেন-‘রাজনৈতিক সুবিধার জন্য তদন্তকে প্রভাবিত করা যাবে না।’
ভুক্তভোগীর নিজ জেলা বিদ-এ বন্ধ পালন করা হয়েছে এবং বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠনের দাবি উঠেছে। এই মৃত্যুতে শোক ও ক্ষোভ এক সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে। এবং প্রশ্ন উঠছে, একজন তরুণ চিকিৎসকের নিরাপত্তা দেয়া কি এতটাই অসম্ভব ছিল?