রাশিয়ার প্রয়াত বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া বলেছেন, দুটি বিদেশি পরীক্ষাগারে তার স্বামীর শরীর থেকে সংগৃহীত জৈবিক নমুনা পরীক্ষা করে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, নাভালনির শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি, ৪৭ বছর বয়সী নাভালনি আর্কটিক সার্কেলে একটি কারাগারে আকস্মিকভাবে মারা যান।
নাভালনায়া বারবার তার স্বামীকে হত্যার জন্য পুতিন সরকারকে অভিযুক্ত করেছেন, যদিও ক্রেমলিন এই অভিযোগকে ‘আজগুবি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, নাভালনির মৃত্যুর আগে, পশ্চিমাদের সঙ্গে বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে তাকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
নাভালনায়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে তিনি দাবি করেন যে, ২০২৪ সালে নাভালনির শরীর থেকে গোপনে জৈবিক নমুনা বিদেশে পাচার করা হয়েছিল। দুটি পরীক্ষাগার ওই নমুনা পরীক্ষা করে একই ফলাফল পেয়েছে—অ্যালেক্সি নাভালনিকে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছিল।
তিনি জানান, পরীক্ষাগারগুলোকে এই ‘অস্বস্তিকর সত্য’ সম্পর্কে তাদের বিস্তারিত ফলাফল প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন, তবে তিনি স্পষ্টভাবে কী ধরনের বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল, তা জানাননি।
নাভালনায়া বলেন, ‘‘এগুলো জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং তা অবশ্যই প্রকাশিত হওয়া উচিত। আমাদের সবার জানার অধিকার আছে।’’
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ নাভালনায়ার মন্তব্য সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না এবং কিছু বলতে পারব না।’’ ক্রেমলিন, নাভালনির রাজনৈতিক মিত্রদের ‘বিপজ্জনক চরমপন্থী’ হিসেবে বিবেচনা করে, যাঁরা রাশিয়াকে অস্থিতিশীল করতে পশ্চিমাদের হয়ে কাজ করতে চায়।
নাভালনি দীর্ঘদিন ধরে পুতিনের রাশিয়াকে ‘চোর, চাটুকার ও গুপ্তচরদের দ্বারা পরিচালিত একটি ভঙ্গুর অপরাধী রাষ্ট্র’ বলে বর্ণনা করতেন। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, রাশিয়া বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখোমুখি হতে পারে।
নাভালনি ২০২৩ সালে রাশিয়ার অভিজাত শ্রেণির দুর্নীতির জন্য কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, রাশিয়া সংস্কারের ঐতিহাসিক সুযোগ হারানোর জন্য তিনি অভিজাত শ্রেণির প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছিলেন।
আর্কটিকের কারাগারে মৃত্যু
অ্যালেক্সি নাভালনি ২০২১ সালে সাইবেরিয়ায় নার্ভ এজেন্ট দিয়ে হত্যার চেষ্টা হওয়ার পর জার্মানি চিকিৎসা নিতে যান। পশ্চিমা পরীক্ষাগারগুলোতে বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এরপর তিনি স্বেচ্ছায় রাশিয়ায় ফিরে আসেন, যেখানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং নানা অভিযোগে সাজা দেওয়া হয়।
২০২৪ সালে নাভালনি রাশিয়ায় ফিরে আসার পর, তাকে কারাগারে পাঠানো হয়, এবং সেই সময় থেকেই তিনি নানা অভিযোগে সাজা ভোগ করছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তাকে চুপ করানোর জন্য এসব সাজা দেওয়া হয়েছিল।
গত বছর, রুশ তদন্তকারীরা দাবি করেছিলেন যে, নাভালনি ‘বিভিন্ন রোগের সম্মিলিত প্রভাবে’ মারা গেছেন, কিন্তু নাভালনায়া এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নাভালনায়া তার স্বামীর মৃত্যুর সময়ের বর্ণনা দিয়ে বলেন, নাভালনি একটি ছোট ব্যায়াম কক্ষে অসুস্থ বোধ করেন এবং যন্ত্রণায় মাটিতে বসে ছিলেন। তারপর তাকে শাস্তির কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি পেটের ও বুকের তীব্র ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন এবং বমি করতে শুরু করেন।
এই ঘটনাটি বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়ে উঠেছে, এবং নাভালনির মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।