উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের আন্দোলন। কানপুরের এক ধর্মীয় মিছিলে প্রথম এই সাইনবোর্ড দেখা যায়, যার ফলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বিরোধিতা করা হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ শুরুতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও, উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টা অভিযোগ এবং সংঘর্ষ শুরু হয়।
৯ সেপ্টেম্বর কানপুরে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা সাইনবোর্ডকে কেন্দ্র করে পুলিশ ২০ জনের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। মুসলিম সম্প্রদায় অভিযোগ তোলে যে, তাদের সাইনবোর্ড ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এর পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ শুরু হয়।
উন্নাও, বরেলি, কৌশাম্বী, লখনউ এবং মহারাজগঞ্জে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। উন্নাওয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আন্দোলনকারীরা ইট নিক্ষেপ ও লাঠি ছিনিয়ে নেন। একই ধরনের উত্তেজনা দেখা দেয় অন্যান্য শহরেও। পুলিশ জানায়, তারা কেবল অন্য ধর্মের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে মামলা করেছে, কিন্তু ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা নিয়ে নয়।
আল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি পুলিশের পদক্ষেপকে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা কোনো অপরাধ নয়। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, আমি শাস্তি নিতে প্রস্তুত।” তার এই বক্তব্য আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বিজেপির মুখপাত্র রাকেশ ত্রিপাঠী পুলিশের পদক্ষেপকে সঠিক বলে দাবি করেন, এবং সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র আমিক জামাই বলেন, ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ বা ‘আই লাভ রাম’ লেখা অপরাধ নয়, পুলিশ সাধারণ মানুষের বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে।
পুলিশ মহারাজগঞ্জে মিছিল আটকে দেয় এবং কৌশাম্বী ও লখনউতে বহুজনকে আটক করে। কয়েকটি এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, তারা সাইনবোর্ডে লেখা নিয়ে নয়, বরং অন্য ধর্মের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে মামলা করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আন্দোলন ধর্মীয় আবেগ এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার সমন্বয়ে দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, এবং পুলিশের কঠোর পদক্ষেপ সত্ত্বেও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ থামছে না। প্রতিটি মিছিল ও বিক্ষোভে তা আরও তীব্র হচ্ছে।
এই আন্দোলন এবং তার পরিণতি ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে, যা শিগগিরই বৃহত্তর প্রভাব ফেলতে পারে।