ইহুদি রাজনীতির দুর্বলতা দেখাল মামদানির জয় 

যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের অভিবাসীদের ওপর আরোপ করা নানা কঠোরতার মধ্যেই দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। অথচ উগান্ডা থেকে আগত মামদানি নিজেও একজন অভিবাসী। ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি সেখানে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন নির্দলীয়ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী নিউইয়র্কের সাবেক ডেমোক্রেটিক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে। অথচ ঐতিহ্যগতভাবে আমেরিকার ইহুদি ডেমোক্রেটিক ভোটারদের অনেকেই অ্যান্ড্রু কুওমোকে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু তরুণ ইহুদিরা ছিলেন মামদানির পক্ষে। 

আবার গাজা সংঘাতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের কারণে মামদানির বিরুদ্ধে আসা ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগগুলোও তিনি মোকাবিলা করেন সাহসের সঙ্গে। ফলে তাদের ডিঙিয়ে নিজের অভিবাসী ও ধর্ম পরিচয়কে সাহসের সঙ্গে তুলে ধরে মামদানি যেভাবে এগিয়েছেন, তা আমেরিকার রাজনীতিতে একটি উদাহরণ হিসেবেই গণ্য হচ্ছে। একই সঙ্গে মামদানির বিজয়ে আমেরিকায় ইহুদি ডেমোক্রেটিক রাজনীতির দুর্বলতাও প্রকাশ্যে এসেছে।  

মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে এক সমাবেশে জোহারান মামদানি নিজের অভিবাসী ও ধর্মীয় পরিচয় আবার এক জনসভায় সাহসের সঙ্গে তুলে ধরেন। ব্রুকলিনের প্যারামাউন্ট থিয়েটারে উল্লসিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, নিউইয়র্ক অভিবাসীদের শহর ছিল এবং তাদেরই থাকবে। কারণ নিউইয়র্ক এমন এক শহর যা অভিবাসীদের দ্বারা নির্মিত, অভিবাসীদের দ্বারা চালিত এবং আজ রাত থেকে একজন অভিবাসী দ্বারা পরিচালিত।

রোববার রয়টার্সে প্রকাশিত দুই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বিশ্লেষক হেলেন কোস্টার ও জেমস অলিপান্তের লেখা এক নিবন্ধে বলা হয়, জোহারান মামদানির নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়া, আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী ডেমোক্রেটিক ইহুদি ভোটারদের সঙ্গে তরুণ প্রগতিশীলদের মধ্যে একটি গভীর ফাটল প্রকাশ করেছে, যা ইসরায়েলের বাইরে বিশ্বের বৃহত্তম ইহুদি জনসংখ্যা অধ্যুষিত নিউইয়র্কের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে।

নিবন্ধে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলের কার্যকলাপ নিয়ে কিছু ডেমোক্র্যাট এবং ইহুদি আমেরিকান যেভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তা থেকে বরং মুসলিম অভিবাসী মামদানি লাভবানই হয়েছেন। কারণ ডেমোক্র্যাট ভোটাররা প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করলেও পরে ধর্মীয় পরিচয়গত কারণে দেশটিকে অন্ধ সমর্থন দিতে থাকে, যা নিরপেক্ষ ও উদারপন্থি তরুণ ভোটারদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল।  

নাগরিকত্ব বাতিলের কথা বলছেন রিপাবলিকানরা: নিউইয়র্ক শহরের প্রথম মুসলিম মেয়রের পদে মামদানিকে মোটেও মেনে নিতে পারছেন না রিপাবলিকান নিন্দুকেরা। যে কোনো মূল্যে তাঁর মেয়র পদে বসা ঠেকাতে চাচ্ছেন তারা। তাই এবার মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের কথা বলছেন। নির্বাচনের আগে থেকে মামদানিকে নিয়ে নানা কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *