পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে তোশাখানা-২ মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) অ্যাডিয়ালা জেলের বিশেষ আদালতের বিচারক শারুখ আরজুমান্দ এই রায় ঘোষণা করেন। উপহার হিসেবে পাওয়া দামি গয়না সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নামমাত্র মূল্যে আত্মসাতের অভিযোগে তাঁদের এই সাজা দেওয়া হলো।
মামলাটির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সৌদি আরবের যুবরাজের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া একটি অতি মূল্যবান ‘বুলগারি’ জুয়েলারি সেট (যার মধ্যে নেকলেস, ব্রেসলেট, আংটি ও কানের দুল ছিল)। সরকারি রেকর্ড ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গয়নাটির বাজারমূল্য ছিল ৭১ মিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি।
অভিযুক্তরা বেসরকারি সংস্থার যোগসাজশে এটির মূল্য কমিয়ে দেখিয়ে মাত্র ৫.৯ মিলিয়ন রুপিতে নিজেদের কাছে রেখে দেন। তদন্তে উঠে আসে যে, উপহারের দাম কম দেখাতে তৎকালীন মুখ্য সচিব ইনাম শাহ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলেন।
আদালত ইমরান ও বুশরা বিবিকে পৃথক দুটি ধারায় এই সাজা দিয়েছেন: ১. ১০ বছর কারাদণ্ড: পাকিস্তান দণ্ডবিধির ৩৪ ও ৪০৯ ধারার অধীনে। ২. ০৭ বছর কারাদণ্ড: ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ ধারার অধীনে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে উভয়কে ১৭ বছর করে জেল খাটতে হবে।
তোশাখানা-২ মামলার বিচার প্রক্রিয়া ছিল দীর্ঘ ও নাটকীয়:
১৩ জুলাই ২০২৪: ইমরান ও বুশরা বিবিকে প্রথম এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
২০ আগস্ট ২০২৪: ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (ন্যাব) দায়রা আদালতে রেফারেন্স দাখিল করে।
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪: অ্যাডিয়ালা কারাগারে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কাজ শুরু হয়।
অক্টোবর ও নভেম্বরে বুশরা বিবি ও ইমরান খান জামিন পেলেও আইনি লড়াই চলতে থাকে। ১২ ডিসেম্বর ২০২৪: তাঁদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অভিযোগ গঠন করা হয়।
প্রায় এক বছরে ৮০টিরও বেশি শুনানির পর আজ চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হলো। এই সময়ে ২৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
তোশাখানা-১ মামলার পর তোশাখানা-২ মামলায় এই বিশাল মেয়াদের সাজা ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল। পিটিআই-এর পক্ষ থেকে এই রায়কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করা হয়েছে এবং উচ্চ আদালতে আপিলের প্রস্তুতি চলছে।