জুলাই আন্দোলন দমাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ দলের নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে হাজারো নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ৫ আগস্ট, যখন তিনি দিল্লিতে অবস্থান করছিলেন, সেই সময় ঢাকায় তার ফোনের কল রেকর্ড মুছে ফেলার কাজ চলছিল। টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা (এনটিএমসি) এর তদানীন্তন মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান লোক পাঠিয়ে এনটিএমসির সার্ভার থেকে শেখ হাসিনার ৪টি ফোন নম্বরের মালিকানাসহ অন্তত ১ হাজার কল রেকর্ড মুছে ফেলেন। এই তথ্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা থেকে পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা জানান, কল রেকর্ড মুছে ফেলার ঘটনা নজিবিহিন এবং এটি এনটিএমসির সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট। তিনি বলেন, “৫ আগস্ট শেখ হাসিনা যখন দিল্লিতে আশ্রয় নেন, তখন এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান এই কল রেকর্ড মুছে ফেলার কাজ করেন।”
ইন্টারনেট বন্ধ করার বিষয়টি তদন্ত করার সময় তদন্ত সংস্থা আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। জিয়াউল আহসান ও এনটিএমসির অন্যান্য কর্মকর্তারা ডিজিটাল আলামত মুছে ফেলার কাজে জড়িত ছিলেন। বিশেষ করে, এই সময় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সাবেক এক পরিকল্পনা মন্ত্রীর কল রেকর্ডও মুছে ফেলা হয়।
এছাড়া, ট্রাইব্যুনালের বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা জুলাই আন্দোলনকালে শেখ হাসিনার কিছু ফোনালাপ উদ্ধার করেন, যেখানে মারণাস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলির মতো নির্দেশনা শোনা যায়। একই সময়ে, আন্দোলন দমন ও হতাহতের তথ্য গোপন করতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হত, যা পরবর্তীতে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। কারণ বাধ্য হয়ে শেখ হাসিনাকে অনেকের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান বর্তমানে গ্রেফতার হয়ে জেলে আছেন এবং তার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যা মামলার বিচার চলমান। “মায়ের ডাক” নামক সংগঠন, যা গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত, জিয়াউল আহসানসহ অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।
এ ঘটনায় এখনও তদন্ত চলছে, এবং মুছে ফেলা কল রেকর্ড উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।