চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময় দাশসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গৃহীত

চট্টগ্রাম নগরীর কোর্ট হিল সংলগ্ন মেথরপট্টি এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাশসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত। গতকাল (২৬ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ বাদী জামাল উদ্দিনের উপস্থিতিতে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, পুলিশের দাখিলকৃত চার্জশিটে ৩৮ জন আসামির নাম থাকলেও তদন্তে বারবার উঠে আসা সুকান্ত নামের এক ব্যক্তিকে সেখানে রাখা হয়নি। অথচ তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, চুরি ও ডাকাতিসহ আটটি মামলা রয়েছে। তাই আদালতে আবেদন করে সুকান্তকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত ৩৯ জনের বিরুদ্ধেই চার্জশিট গ্রহণ করেন।

আসামিদের মধ্যে চিন্ময় দাশ, চন্দন দাশ, রিপন দাশ, রাজীব ভট্টাচার্য্য, আমান দাশ, রনব, বিধান, রমিত, রুমিত, নয়ন, সামীর, শিব কুমার, ওম দাস, অজয়, দেবী চরণ, দুর্লভ, সুমিত, সনু দাসসহ ২০ জন কারাগারে আছেন। বাকিরা পলাতক। শুনানির সময় কারাবন্দি আসামিদের ভার্চুয়ালি যুক্ত করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ২৫ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ঢাকায় গ্রেপ্তার হন চিন্ময় দাশ। জামিন নামঞ্জুর হলে তিনি আদালত পাড়ায় উত্তেজনা সৃষ্টি করেন এবং তার সমর্থকদের উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। পরবর্তীতে ৬০০-৭০০ সমর্থক আদালত এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করেন। ইসকন সদস্যরা পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ করেন। আদালতের মসজিদ, দোকানপাট, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

সেদিন বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে রঙ্গম হলের গলির মুখে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে একদল সন্ত্রাসী টেনে হিঁচড়ে মেথরপট্টির দিকে নিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করতে গেলে আইনজীবী ও সাধারণ মানুষ বাধা দেয়। এ সময় কিরিচ, বটি, রড, লাঠি, ছুরি ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র দিয়ে আলিফকে নৃশংসভাবে আক্রমণ করা হয়। রিপন দাশ, চন্দন দাশ, রাজীব ভট্টাচার্য্যসহ অনেকেই আলিফকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেন। পরে তিনি মারা যান।

আদালত সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ৩১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছিল। তদন্তে তিনজনকে বাদ দিয়ে নতুন করে ১০ জনকে যুক্ত করে মোট ৩৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়ে। পরবর্তীতে সুকান্তকে যুক্ত করে মোট আসামি দাঁড়ায় ৩৯ জন।

আলিফ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে মোট সাতটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালী থানায় ছয়টি এবং আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়। পুলিশের করা তিনটি মামলায় ৭৯ জন, আলিফের পরিবারের দায়ের করা দুটি মামলায় মোট ১৪৭ জন এবং আরও দুটি মামলায় ২৯ ও ১৬৪ জনের নাম রয়েছে।

আদালত চার্জশিট গ্রহণের মাধ্যমে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *