আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
একই সঙ্গে ভোটকেন্দ্র, ভোটার ও প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ভোটের আগে-পরে সাত দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ইসির উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মোহাম্মদ মনির হোসেনের সই করা বিশেষ পরিপত্র জারি করে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সব দল ও প্রার্থী যাতে নির্বিঘ্নে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে এবং ভোটাররা নিরাপদে ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করা হবে। তাছাড়া ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী; প্রিজাইডিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকবে।
ইসি জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাঠামো অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচনের আগে-পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাহিনী ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বজায় রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। মাঠপর্যায়ে রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারদের প্রয়োজন অনুযায়ী অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সহায়তা দেওয়া হবে।
পরিপত্রে বলা হয়, নির্বাচনের সময় কেন্দ্র ভিত্তিক বাহিনী মোতায়েন থাকবে। তাছাড়া চেকপোস্ট, মোবাইল টহল ও আভিযানিক
দল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স কার্যকর থাকবে। নির্বাচনের আগে চারদিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পর দুইদিন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা ও অপতথ্য মনিটরিং সেল পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার, গুজব ও অপতথ্য রোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তা, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে কাভারেজ এবং বডি ক্যামেরার মাধ্যমে লাইভ পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা হবে। ভোটারদের স্বচ্ছ, নিরাপদ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের নিশ্চয়তার জন্য এসব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন চায় ইসি
সারাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়গুলোয় সার্বিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ইসি। চিঠিতে এসব কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করার নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে এই চিঠি পাঠায় ইসি। চিঠিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়গুলোর নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের নির্দেশনা দিতেও বলা দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ ইসির
জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিদেশি গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে আগামী ১৭ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদের সই করা চিঠি থেকে বিষয়টি জানা যায়।
এতে বলা হয়, নির্বাচন প্রক্রিয়ার সব কার্যক্রম দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। এই প্রেক্ষাপটে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক, পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং বিদেশি গণমাধ্যমকে স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয় করে আসন্ন নির্বাচন ও গণভোট পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানানো হয়েছে। আবেদন জমা দেওয়ার শেষ সময় ১৭ জানুয়ারি।
গণভোটে অংশগ্রহণ বাড়াতে উঠান বৈঠক শুরু আজ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোটে ব্যাপক অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে আজ শুক্রবার থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক হবে। ভোটারদের বিশেষ করে প্রথমবারের মতো যারা ভোটার হয়েছেন সে সব তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে ‘ভোটালাপ’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এই কর্মসূচির আওতায় জেলা তথ্য অফিসগুলোর উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণভোটে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে জেলা তথ্য অফিসসমূহের প্রচার কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা বৈঠকে গতকাল এসব সিদ্ধান্ত হয়। তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মাহবুবা ফারজানা এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুল জলিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। জুম প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত এতে মাঠ পর্যায়ের ৬৮ তথ্য অফিসের প্রধানরা অংশ নেন।
তথ্য সচিব বলেন, এবারের গণভোটকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করতে সব ভোটারের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। ভোটারদের উজ্জীবিত করার দায়িত্ব তথ্য অফিসগুলোকেই পালন করতে হবে। জনগণকে ভোটদানের
উপকারিতা জানাতে হবে। ন্যায় ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হলে সবাইকে গণভোট অংশ নিতে হবে।
গণভোটের প্রচারে আঞ্চলিক ভাষা ও সংস্কৃতিনির্ভর কনটেন্ট এবং বক্তব্য তুলে ধরতে হবে। গণভোট ও নির্বচনি আচরণবিধি সম্পর্কে ভোটার সচেতনতা বাড়াতে ‘টেন মিনিট ব্রিফ’ কর্মসূচি গ্রহণের তাগিদ দেন তিনি। এ কর্মসূচির আওতায় গ্রামের ছোট ছোট বাজারে দাঁড়িয়ে ১০ মিনিট নির্বাচন সংক্রান্ত করণীয় এবং বর্জনীয় সম্পর্কে বক্তৃতা ও প্রচারপত্র বিতরণের নির্দেশনা দেন সচিব।
বৈঠকে গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুল জলিল বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি, গণভোট সম্পর্কে তরুণ ভোটারদের উৎসাহ ও নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে গণ যোগাযোগ
অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা নিরলস কাজ করছেন। ইতোমধ্যে গণভোট সংক্রান্ত ১০টি সংগীতের রেকর্ডিং চলছে। শিগগিরই এসব সংগীত মাঠ পর্যায়ে পরিবেশনের ব্যবস্থা
করা হবে।
অনুষ্ঠানে গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের পরিচালক মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন, বরিশাল জেলা তথ্য অফিসের পরিচালক ওমর ফারুক দেওয়ান, রংপুর জেলা তথ্য অফিসের পরিচালক ড. মোফাখ খারুল ইকবাল, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ এ মু’মেন ও গণযোগাযোগ অধিদপ্তর এর পরিচালক ডালিয়া ইয়াসমিন বক্তব্য রাখেন।