ঐক্যে দেওয়া হচ্ছে গুরুত্ব, বিশৃঙ্খলায় কঠোর ব্যবস্থা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। এরই মধ্যে মাঠ জরিপ শেষ করে প্রতিটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎ পর্ব শেষ করেছে দলটি। এখন শুরু হয়েছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে দলের হাইকমান্ডের বৈঠক।

গতকাল রোববার পাঁচ সাংগঠনিক বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ আরও পাঁচটি বিভাগের সঙ্গে বৈঠক হবে।

এ বৈঠক থেকে আসনকেন্দ্রিক দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে প্রত্যেককে সক্রিয় ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দল থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীকে বঞ্চিতদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার জন্য বলা হয়েছে। বিভেদ ভুলে ধানের শীষ নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী ফসল ঘরে তুলতে সব প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে নেতাদের। সেখানে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

বিএনপি হাইকমান্ডের এমন নির্দেশনার পর ঐক্যে গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নামার কথা জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তারা বলছেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে সব মনোনয়নপ্রত্যাশী ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করবেন। নির্বাচনে জয়লাভের লক্ষ্যে এখানে ব্যক্তির চেয়ে ধানের শীষের প্রার্থীকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্তত ১৩ মনোনয়নপ্রত্যাশী এসব তথ্য জানিয়েছেন।

জানা যায়, রোববার সাংগঠনিক বিভাগ চট্টগ্রাম, রংপুর, কুমিল্লা, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহের অন্তত চার শতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী নিয়ে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেখানে বিএনপি মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব উপস্থিত ছিলেন। তবে এদিন বৈঠকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ বক্তব্য রাখেননি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। ভোটের মাঠে বিএনপি একক প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ওপর জোর দেন তিনি। একই সঙ্গে যারা মনোনয়নবঞ্চিত হবেন তাদের দল থেকে যথাযথ মূল্যায়নের আশ্বাস দেন।

বৈঠকে তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে বলেন, এবারের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী প্রেক্ষাপট অতীতের চেয়ে ভিন্ন। সবাইকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে হবে। প্রত্যেক ভোটারের কাছে ভোট চাইতে হবে। জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। দলের মনোনীত প্রার্থীকেও সবার (মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যক্তি ও দলীয় নেতাকর্মী) সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। কেউ মনোনয়ন পেলে এলাকায় মিষ্টি বিতরণসহ এমন কোনো কর্মকাণ্ড করা যাবে না, যাতে অন্যরা (যারা মনোনয়ন পাবেন না) মনে কষ্ট পান। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে যারা দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটাবে, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৈঠকে আবেগতাড়িত হয়ে বিএনপিকে সন্তানের মতো ভালোবাসার কথাও বলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

রোববার বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, প্রতিটি আসনে একাধিক স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা বিএনপির হাতে রয়েছে। কয়েক দফায় তাদের তথ্য ও মাঠ পর্যায়ের অবস্থান যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। এমন অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সব মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে বৈঠক করে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর পক্ষে মাঠে কাজ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের কাছে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট টানার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রাতে রংপুর, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের অন্তত সাতজন মনোনয়নপ্রত্যাশী জানান, নির্বাচনী মাঠে ঐক্যের জোর দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা দেখা দেবে। যারা আগে ব্যক্তিগত প্রচারণায় সীমাবদ্ধ ছিলেন, তারাও এখন দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছেন। প্রতিটি এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও ঘরে ঘরে ৩১ দফা নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী রফী উদ্দিন ফয়সাল বলেন, এই আসন থেকে ৭ জনকে গুলশান কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। সবাইকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা সবাই তাঁর পক্ষে কাজ করব। আমাদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে থাকব।

চট্টগ্রাম-১২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী সৈয়দ সাদাত আহমেদ বলেন, পটিয়ার এই আসন থেকে আমরা চারজন গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে অংশ নিয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে ঐক্যের গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। রাজনীতি করার কারণে আমাকে গুম করা হয়েছে। নানাভাবে দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছি। এরপরও দলীয় সিদ্ধান্তে আমি অটল।

আজ ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করবেন তারেক রহমান। তবে এ বৈঠকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ যেন তাদের সমর্থকদের গুলশান কার্যালয় কিংবা আশপাশের এলাকায় না নিয়ে আসে সে বিষয়ে গতকালই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ বলেন, কেউ দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা মেনে ঐক্যবদ্ধ থাকব।

ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা বলেন, এই আসনে মনোনয়ন পেলে ধানের শীষের বিজয় উপহার দিতে পারব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *