সন্তানের মুখে ‘বাবা’ ডাক যেদিন শুনব, সেদিনই…

জন্মদিন নিয়ে শৈশবে বেশ আগ্রহ ছিল কুমার বিশ্বজিতের। সংগীতজীবনে চার দশক পেরোনো এই সংগীতশিল্পী ছোটবেলায় চাইতেন, এই বিশেষ দিনটি পাঁচ দিন পরপর আসুক। কারণ, এই দিনে তাঁর বায়না থাকত অন্য দিনের চেয়ে আলাদা। উপহার হিসেবে তিনি জামাকাপড় কিংবা কেক চাইতেন না। কিন্তু দুই বছর ধরে এই দিনটি নিয়ে তাঁর মধ্যে আর কোনো চিন্তাভাবনাই কাজ করে না।

গতকাল ১ জুন ছিল এই তারকার জন্মদিন। দুই বছর ধরে দিনটিতে তাঁকে কানাডায় থাকতে হচ্ছে। কারণ, একমাত্র ছেলে নিবিড় কুমার দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। গতকাল বাংলাদেশ সময় রাতে যখন কথা হচ্ছিল, তখন তিনি ছেলেকে দেখতে কানাডার মিসিসাগার একটি রিহ্যাব সেন্টারে যাচ্ছেন, সেখানেই এখন ছেলের চিকিৎসাসেবা চলছে।

কুমার বিশ্বজিৎ জানান, জন্মদিন, বিশেষ দিন—সব দিনই এখন তাঁর কাছে মলিন। তিনি বলেন, ‘ছেলে বড় হওয়ার পর থেকে আমার জন্মদিন নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল ওর। বাবার কাছে সময় চেয়ে নিত। সন্ধ্যায় একসঙ্গে ঘুরতে বের হতো। কেক কাটত। আমাকে নিয়ে ছেলের উৎসাহ সবচেয়ে বেশি ছিল। কানাডায় পড়াশোনা করতে যাওয়ার পরও শুধু আমার জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিতে কাউকে কিছু না বলে চলে যায়। তারপর কয়েকটা দিন থেকে আবার কানাডায় চলে আসে। আমার সেই হাসিখুশি ছেলে দুই বছর ধরে শয্যাশায়ী। কথা বলতে পারে না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এখন আমার কাছে দিন–রাত সবই সমান। নিবিড় যেদিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে, আমাকে “বাবা” বলে ডাকবে, সেদিনই আমার জন্মদিন।’

কথা প্রসঙ্গে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘নিবিড়ের দুর্ঘটনার পর আমার জীবন একটা জায়গায় থেমে আছে। আমার কিছুই ভালো লাগে না। সন্তানের চেহারার দিকে তাকালে…তীক্ষ্ণ অপেক্ষা। প্রতিমুহূর্তে মনে হয়, এই বুঝি ছেলেটা “বাবা” বলে ডাকবে।’জন্মদিনে ভক্ত–শুভাকাঙ্ক্ষী, সহকর্মী ও প্রিয়জনেরা ফেসবুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। লিখেছেন নানান কথাও। এসব নজরে এসেছে কুমার বিশ্বজিতের। তিনি বলেন, ‘সবাইকে আলাদাভাবে ধন্যবাদ জানানোর মতো অবস্থায় নেই। অনেকে আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়েছে। ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম অনেক অনেক শুভেচ্ছাবার্তা। সবার সেই শুভেচ্ছাবার্তার উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থা আমার নেই। আমি সবার এই ভালোবাসায় আপ্লুত। তাদের ভালোবাসা সব সময় আমি মাথায় তুলে রাখি। এবারও তা–ই।’

ছোটেবেলায় জন্মদিনের কয়েক দিন আগে থেকেই কুমার বিশ্বজিৎ পরিবারের সদস্যদের কাছে বায়না ধরতেন, তাঁকে বাদ্যযন্ত্র উপহার দিতে হবে। শৈশবের সেই দিনগুলোয় উপহার হিসেবে পেয়েছেন ড্রামস, গিটার, বেজ গিটারসহ নানা কিছু। এই উপহারগুলো পেতে তিনি দিনের পর দিন অপেক্ষা করতেন। জন্মদিনের এই উপহারগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর অনেক স্মৃতি। কিছু উপহার তাঁর জীবন বদলে দিয়েছে। জন্মদিনের সেরা উপহার হিসেবে একবার তিনি একটি টেপ রেকর্ডার পেয়েছিলেন। তখন তিনি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। পরে সেই টেপ রেকর্ডার তাঁর ক্যারিয়ারে শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছিল।

এই গায়ক বলেন, ‘টেপ রেকর্ডারের প্রতি আমার সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ছিল। আমি তখন গান শুনতাম আর সুরগুলো রেকর্ড করতাম। অনেক সময় গান গেয়ে নিজের রেকর্ড করা কণ্ঠ শুনতাম। মূল শিল্পীর গায়কির সঙ্গে তুলনা করতাম। তাদের গান শুনে আমি সুর, তাল, লয় শিখতাম। তখন প্রযুক্তির এত অগ্রগতি হয়নি। এই টেপ রেকর্ডারই আমার ভুল ধরার জন্য শিক্ষকের মতো ছিল।’শৈশবে জন্মদিন উদ্‌যাপন ভালো লাগলেও এখন সংকোচে কাটে জন্মদিনটি। এই দিনে অসংখ্য মানুষ কুমার বিশ্বজিৎকে শুভেচ্ছা জানান, ভালোবাসা জানান। এতেই তাঁর সংকোচ। তাঁর কাছে মনে হয়, এই প্রাপ্তির চেয়ে হয়তো তাঁর কাজ অনেক কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *