নৃত্যশিল্পী থেকে যেভাবে জেমসের জীবনসঙ্গী হয়ে উঠলেন নামিয়া

বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীত জগতের এক জীবন্ত কিংবদন্তি নগর বাউল জেমস। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সর্বদাই সংগীতপ্রেমী ও সাধারণ মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। সম্প্রতি সেই জীবনে যুক্ত হয়েছে একের পর এক নতুন অধ্যায়–তৃতীয় বিয়ে এবং তারপর পুত্রসন্তান লাভ। এই দুটি ঘটনাই দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে হয়ে উঠেছে আলোচনার বিষয়।

প্রেমের শুরু লস অ্যাঞ্জেলেসে
২০২৩ সালে নগর বাউলের আমেরিকা সফরই এই প্রেমের সূচনা করে। লস অ্যাঞ্জেলেসে এক কনসার্টের সময় জেমসের সঙ্গে পরিচয় হয় নামিয়া আমিনের। এই পরিচয়ই ধীরে ধীরে গড়ায় ঘনিষ্ঠতায় এবং শেষ পর্যন্ত পরিণয়ে। আমেরিকা ট্যুর শেষে জেমস দেশে ফিরে এলেও, দুজনের সম্পর্ক থেমে থাকেনি। মনের টানে নামিয়াও ছুটে আসেন বাংলাদেশে। এরপর ২০২৪ সালের ১২ জুন তারা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর থেকেই তারা বসবাস করছেন জেমসের বনানীর বাসায়।

সন্তান ও নতুন দায়িত্ব
বিয়ের মাত্র এক বছরের মধ্যেই তাদের দাম্পত্য জীবন পূর্ণতা পায়। ২০২৫ সালের ৮ জুন, স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে নিউইয়র্কের হান্টিংটন হাসপাতালে নামিয়া আনাম জন্ম দেন তাদের প্রথম পুত্রসন্তানের। সদ্যোজাত শিশুটির নাম রাখা হয়েছে জিবরান আনাম। এই সুখবরে জেমসের ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা যেমন আনন্দিত, তেমনি এই পরিবর্তন জেমসের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন তাঁর কাছের মানুষেরা।

নৃত্যশিল্পী থেকে জেমসের জীবনসঙ্গী
নামিয়া আনাম মূলত একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে আমেরিকায় খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁর বাবা-মা নুরুল আমিন ও নাহিদ আমিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সেখানে বেড়ে ওঠা নামিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সংগীততারকার এই সংসার শুরু হয়েছিল দূর দেশের পরিচয়ে, কিন্তু এখন তা পূর্ণতা পেয়েছে একটি সন্তানের মধুর উপস্থিতিতে।

জেমসের আগের সম্পর্ক ও সন্তানরা
এটি জেমসের তৃতীয় বিয়ে। এর আগে তিনি চিত্রনায়িকা রথি এবং বেনজীর সাজ্জাদের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। প্রথম স্ত্রী রথির ঘরে জেমসের দানিশ ও জান্নাত নামে এক পুত্র ও এক কন্যা রয়েছেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে এখন নিজ নিজ পেশায় ব্যস্ত। অন্যদিকে, দ্বিতীয় স্ত্রী বেনজীর তাদের কন্যা জাহানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ২০১৪ সালে বেনজীরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত এবং জেমসের বাংলাদেশ ও তাঁর সংগীতকে আঁকড়ে ধরে থাকার ইচ্ছাই তাদের বিচ্ছেদের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন সমঝোতার ভিত্তিতে তাদের পৃথক জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নতুন জীবন-ভবিষ্যৎ
এতকিছুর পর এই বয়সে পুত্রসন্তান লাভ জেমসের জীবনে একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করেন তাঁর কাছের বন্ধু ও স্বজনরা। নবজাতকের বাবা হওয়ার অনুভূতি ও দায়িত্ব তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃষ্টিশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

নতুন এই জীবন নিয়ে জেমস নিজেই বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ কৃপায় ভালো আছি। যতদিন বাঁচি, যেন গান গেয়ে যেতে পারি। দোয়া চাই সবার কাছে। সবাই আমাকে প্রার্থনায় রাখবেন।’

জেমসের এই নতুন জীবনযাত্রা এবং সদ্যোজাত পুত্রসন্তান নিঃসন্দেহে তাঁর জন্য নিয়ে এসেছে গভীর তৃপ্তি ও নতুন উদ্দীপনা। ভক্তদের আশা, এই পরিবর্তন তাঁর সৃষ্টিশীলতায় যোগ করবে নতুন মাত্রা এবং বাংলা সংগীতাঙ্গন পাবে আরও অনেক গান, যা জেমসের জীবনের এই নতুন অধ্যায়ের মতোই সমৃদ্ধ ও হৃদয়গ্রাহী হবে।

অন্যদিকে গানের বিষয়ে জেমস নিজেও শুনিয়েছেন আশার কথা। বলেছেন, ‘অনেকদিন নতুন গান প্রকাশ পায়নি ঠিকই, কিন্তু যখন গান প্রকাশ শুরু হবে, তখন দেখা যাবে একটির পর একটি গান আসছেই। কাজ থেমে নেই, তাই এই প্রতিশ্রুতি দিতেই পারি।’

যদিও নতুন গান প্রকাশের দিন, তারিখ নিশ্চিত করেননি নগর বাউলখ্যাত এই তারকা। তারপরও এই প্রতিশ্রুতি যেমন ভক্ত-শ্রোতার মুখে হাসি ফোটাবে এটি অনুমান করা নেওয়া যায় সহজেই। এও বলা যায়, গানের পাশাপাশি তিনি আবারও অনুরাগীদের বিস্ময় করবেন নতুন পরিচয়। যে পরিচয়টা গিটার নয়, ক্যামেরার সূত্রে তাঁর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।

ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস নামের মানুষটিকে কয়েক দশক ধরে গানের টানে দেশ-বিদেশের মঞ্চে ছুটে যেতে দেখেছি আমরা। তাঁর পরিবেশনার সঙ্গে শ্রোতার উন্মাতাল উচ্ছ্বাস, আনন্দ, চিল-চিৎকার, বারবার গান শোনার আহ্বান–এই দৃশ্যগুলোই প্রধান হয়ে উঠেছে, এটি ভাবলে ভুল হবে। কারণ, মঞ্চ থেকে নেমে আসার পর জেমসের চোখে ধরা দিয়েছে বিশ্বের তাবৎ বিষয়। যেগুলো তিনি ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন তাঁর ক্যামেরায়। তাইতো জেমসের ছবি তোলার প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে মডেল, নাগরিক জীবন আর প্রকৃতি। তাঁর ক্যামেরার চোখ এই বিষয়গুলোকে তুলে ধরেছেন ভিন্ন আঙ্গিকে, নানা অবয়বে। এভাবেই দেশসেরা রকস্টারের পাশাপাশি তিনি হয়ে উঠেছেন ক্যামেরার কবি।

ফটোগ্রাফিটা তাঁর অনেকটা শখ থেকে নেশার পর্যায়ে চলে এসেছে। তাই গানের টানে যে দেশে যান, সেইখানে গিটারের সঙ্গে ক্যামেরাকেও সঙ্গী করে নেন। তবু পৃথিবীর বহু দেশ, বহু পথ মারিয়েও তাঁর মন পড়ে থাকে দেশের পানে। জেমসের কথায়, ‘স্বদেশের প্রতি যে ভালোবাসা, মুগ্ধতা, তা কোনো দেশই ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা বেশি থাকাটা নিশ্চয়ই দোষের কিছু না। অনেক কিছুর পরও এটিই সত্যি, আমি এই দেশের শিল্পী, এই দেশের মানুষ, যাদের সবসময় বলি, আমি তোমাদেরই লোক।’ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *