অলঙ্ঘনীয় নিয়তির গল্প

গ্রিক ট্র্যাজেডিগুলোর মধ্যে সম্ভবত ‘ইডিপাস’ সবচেয়ে জনপ্রিয়। ৪২৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে সফোক্লিস রচিত এ নাটকটি যুগে যুগে কালে কালে নানা দেশে, নানা কারণে নানা ব্যাখ্যায় নানা রীতিতে মঞ্চস্থ হয়েছে। অ্যারিস্টটল তাঁর শিল্পতত্ত্বে ট্র্যাজেডির আদর্শ হিসেবে ‘ইডিপাস’কেই তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশেও এ নাটক নিয়ে নানা নিরীক্ষা হয়েছে। বিভিন্ন দল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ছাড়াও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের উদ্যোগে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছে। সম্প্রতি দৃশ্যকাব্য রেপার্টরি নাট্যদল নাটকটি মঞ্চে নিয়ে এসেছে।

গত ৬ নভেম্বর নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। সৈয়দ আলী আহসানের অনুবাদে নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন হাবিব মাসুদ। নির্দেশক ‘ইডিপাস’ নাটকের বিষয়বস্তুকে বাংলাদেশের সমকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতার বাস্তবতায় দেখতে চেয়েছেন।

নাটকের মূল ‘ইডিপাস’ চরিত্রে এইচ এম মোতালেব শত চেষ্টা করেও নিয়তির নির্মম পরিণতি থেকে বের হতে পারেননি। নিজের বাবাকে হত্যা করতে হবে বলে করিস্থ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন থিবিতে। কিন্তু অদৃষ্ট থেকে মুক্তির উপায় কি? ইডিপাস চরিত্রে এইচ এম মোতালেব যেন সে মানসিক দ্বন্দ্বটাই তুলে ধরতে চেয়েছেন।

নাটকটি শুরু হয় থিবির জনগণের কষ্টে জর্জরিত প্রজাকল্যাণী রাজা ইডিপাসের প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে। রাজ্যে যে পাপ ঢুকছে, তা নির্মূল না করলে রাজ্যের খরা-ব্যাধি-বিধ্বস্ততা বন্ধ হবে না। ইডিপাস এইচ এম মোতালেব এক মানবীয় আদর্শ। নিজেদের বিপদকেও অগ্রাহ্য করে প্রজাকল্যাণে হাঁটেন সত্যের সন্ধানে। অনবদ্য চলনভঙ্গি, অস্থিরতার অভিব্যক্তি, সুস্পষ্ট সংলাপ আর মেকআপ-গেটআপ সাত্ত্বিক অভিনয়ের জীবনের করুণ আর্তচিৎকার যেন দর্শকের মর্মমূলে আঘাত হানে। অপরদিকে রানী জোকাস্টা চরিত্রে ঝুমু মজুমদার যেন শৌর্য-সুন্দর ও মোহনীয়তার প্রতীক। রানী জোকাস্টা নাটকে একজন প্রেমময়ী নারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *