আইনে নিষিদ্ধ হলেও গোপালগঞ্জ পৌর এলাকায় কুকুর নিধনের অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলছেন, পৌরসভার কর্মীরা জাল দিয়ে কুকুর ধরার পর বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে হত্যা করছেন। পরে ময়লার গাড়িতে করে নেওয়া হচ্ছে মৃত কুকুর। এসব অভিযোগ পৌর কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করেছে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাও।
কুকুর নিধনের একটি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নবীনবাগ এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। তিনি ২০ অক্টোবর ভোরে ঢাকা যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন। কিছুক্ষণ পর গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের সামনে পৌরসভার কর্মীদের কুকুর নিধন করতে দেখেন। রবিউল ইসলামের ভাষ্য, ‘প্রথমে নেট দিয়ে কুকুর ধরার পর ওরা ইনজেকশন পুশ করে মেরে ফেলে। সে সময় সেখানে পৌরসভার কয়েকজন লোক উপস্থতি ছিলেন। পরে মৃত কুকুরগুলো পৌরসভার ময়লার গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি ঘটনাটির ছবি ও ভিডিও করে ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করি।’
১৬ অক্টোবরের আরেকটি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের সীতানাথ মথুরানাথ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পৌরসভার লোকজন দুটি কুকুর ধরেছিল। নেট দিয়ে আটকানোর পর তারা কুকুরগুলোকে ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করে। পরে ময়লার ছোট গাড়িতে কুকুরের মরদেহ নিয়ে যায় তারা।’
এসব তথ্য, ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রাণিপ্রেমীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গোপালগঞ্জের থানাপাড়ার বাসিন্দা ফ্লোরা হোসেন থাকেন খুলনায়। পেশায় ফ্রিল্যান্সার এই প্রাণিপ্রেমী পথে-প্রান্তরে অসুস্থ প্রাণী খুঁজে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, ‘বেশি অসুস্থ প্রাণীগুলো খুলনায় নিয়ে আসি। অপেক্ষাকৃত কম অসুস্থ প্রাণীগুলো গোপালগঞ্জে রেখে চিকিৎসা দেই। সুস্থ হলে প্রাণীগুলো অবমুক্ত করে দেই। এ ছাড়া ভ্যাকসিনেশনসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করি। নির্মমভাবে কুকুর নিধনের ঘটনা আমাকে মর্মাহত করেছে।’
প্রাণিপ্রেমী ফ্লোরা হোসেনের ভাষ্য, ‘গোপালগঞ্জ পৌরসভার টি-শার্ট পরা কর্মীরা অন্তত চার দিন নির্মমভাবে কুকুর হত্যা করেছে। অ্যানিম্যাল লাভার সোসাইটি বা সংগঠনকে না জানিয়েই তারা এটি করেছে। কুকুর বন্ধ্যাকরণের দায়িত্ব পৌরসভার। কিন্তু তারা এটি করেনি। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কুকুর হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করলেও যথেষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। কুকুর হত্যার জন্য তাদের ক্ষমা চাইতে হবে।’
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন গোপালগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক বিশ্বজিৎ কুমার পাল। তাঁর দাবি, পৌর কর্তৃপক্ষ কুকুর নিধনে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তবে পৌরবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে শহরে বেওয়ারিশ কুকুর বৃদ্ধির বিষয়ে অভিযোগ এসেছে। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় একাধিকবার আলোচনাও হয়ছে।
বিশ্বজিৎ পালের ভাষ্য, কীভাবে জনভোগান্তি কমিয়ে কুকুর স্থানান্তর করা যায়, এ নিয়ে ভাবছেন তারা। তবে এখনও কোনো কার্যক্রম নেওয়া হয়নি। সামাজিক মাধ্যমে যেসব ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। এগুলো বিভ্রান্তিকর বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা, সেটাও দেখছেন তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোবিন্দ চন্দ্র সরদার বলেন, কুকুর নিধন আইন করে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু কুকুর নয়, যে কোনো প্রাণী হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ। কোনো সংস্থা যদি এমন কাজ করে থাকে সেটিও আইনের আওতায় পড়বে। বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া যায় উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, কোনো কুকুর জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মানুষ বা অন্য প্রাণীর জন্য হুমকি হয়ে উঠলেই ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।