খেলার জায়গা নষ্ট করে স্থায়ী মঞ্চ তৈরি

খুলনা নগরীতে শিশুদের বিনোদনের জায়গা খুবই কম। নগরীর রয়েল মোড়ের পাশে জাতিসংঘ শিশু পার্কটিই একমাত্র উন্মুক্ত। তবে এখানে বছরের বিভিন্ন সময় মেলার নামে বাণিজ্য চলে। এটি সারাবছর শিশুদের জন্য উন্মুক্ত রাখা এবং খেলনার সংখ্যা বাড়াতে আন্দোলন করছে বিভিন্ন সংগঠন। এর মধ্যে পার্কের ভেতর স্থায়ী রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি শুরু করেছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)।

নাগরিক নেতারা বলছেন, মেলার কারণে বছরের বিভিন্ন সময় শিশুদের খেলাধুলা বন্ধ থাকে। এখন ভেতরে স্থায়ী মঞ্চ তৈরি হলে সারাবছর রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের কর্মসূচি থাকবে। একমাত্র উন্মুক্ত শিশু পার্কও খেলার উপযোগী থাকবে না।

তারা বলেন, এ ছাড়া পার্কের একপাশে বড় একটি বেসরকারি হাসপাতাল, অন্যপাশে মসজিদ রয়েছে। পার্কে সমাবেশ বা মেলা হলে শিশুরা যেমন খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হয়, তেমনি হাসপাতালের রোগীরাও কষ্ট পায়। ক্ষুব্ধ হন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে কেসিসিকে এ প্রকল্প থেকে সরে আসা উচিত। 

খুলনা নগরীতে কেসিসির পার্ক রয়েছে ৬টি। এর মধ্যে নিরালা ও সোনাডাঙ্গা শিশু পার্ক শুধু নামেই। সেখানে বিনোদনের ন্যূনতম পরিবেশ নেই। গোলকমনি পার্কে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ ছাড়া কিছু নেই। হাদিস পার্কে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচি থাকায় শিশুদের খেলার পরিবেশ থাকে না। খালিশপুর ওয়ান্ডারল্যান্ড ও গল্লামারী লিনিয়ার পার্কটি ইজারা দেওয়া। অতিরিক্ত প্রবেশমূল্যের কারণে সেখানে নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুরা প্রবেশের সুযোগ পায় না। একমাত্র জাতিসংঘ শিশু পার্কটিতে শিশুসহ সব বয়সী নারী-পুরুষ ভিড় করেন। 

কেসিসি থেকে জানা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর পার্কটি সংস্কারের জন্য সরদার অ্যান্ড সন্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়েছে কেসিসি। ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায় তাদের পার্কের সীমানাপ্রাচীর ও গ্রিল সংস্কার, রং করা, চারটি খেলনা স্থাপন ও একটি মঞ্চ নির্মাণের কথা রয়েছে। গত রোববার থেকে তারা কাজ শুরু করেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, পার্কের উত্তর পাশে ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের ৬ মিটার প্রস্থ এবং দুই ফুট উঁচু মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। একপাশে মঞ্চ হলেও ভবিষ্যতে এটিকে কেন্দ্র করেই পার্কে নিয়মিত সভা-সমাবেশের আয়োজন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমানে উন্মুক্ত সভা-সমাবেশের জন্য হাদিস পার্ক ব্যবহারের অনুমতি দেয় কেসিসি। সেখানে কেসিসির উদ্যোগে বড় মঞ্চ নির্মাণ করা রয়েছে।

মঞ্চ নির্মাণের বিষয়ে খোঁজ নিতে গতকাল সোমবার দুপুরে নগর ভবনে গিয়ে জানা যায়, কেসিসির স্থপতি, নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রধান প্রকৌশলী কেউই এ বিষয়ে কিছু জানেন না। পার্ক সংস্কারের নকশায়ও মঞ্চের বিষয়টি ছিল না। প্রতিবেদকের মাধ্যমে জানতে পেরে তাৎক্ষণিক পার্কে লোক পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করা হয়।

কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, ‘আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে। সরেজমিন কারা মঞ্চ নির্মাণের আবেদন করেছে, প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা দেখে সিদ্ধান্ত নেব।’

জনউদ্যোগ খুলনার সদস্য সচিব মহেন্দ্রনাথ সেন বলেন, ‘আগে মেলার নামে শিশুদের বিনোদনকে হত্যা করা হতো। এখন মঞ্চ বানিয়ে একমাত্র বিনোদনের পার্কটিও হত্যার আয়োজন করা হচ্ছে।’
শিশু সংগঠন শিশু স্বর্গ খেলাঘর আসরের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, শিশুদের একটি মাত্র উন্মুক্ত পার্ক রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কর্মসূচি দেব। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *