ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুনে পুড়ে গেছে ওষুধের কাঁচামাল সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ ও রাসায়নিকের গুদাম। এসব কক্ষ নতুন নির্মাণে সময় লাগবে অন্তত তিন মাস। এর মধ্যে আমদানি হওয়া কাঁচামাল বিমানবন্দরে সংরক্ষণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির আশঙ্কা, কাঁচামাল সংরক্ষণের এই জটিলতা যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে তা ওষুধের উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ডা. মো. জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাঁচামাল ভস্মীভূত হওয়ায় ওষুধ শিল্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন ফার্মা কোম্পানি থেকে প্রাথমিকভাবে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে শীর্ষ ৪৫টি কোম্পানির প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল পুড়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাব প্রায় চার হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এমন পরিস্থিতিতেও ওষুধের দাম বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
ওষুধ শিল্প সমিতির কোষাধ্যক্ষ মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, সামনে যেসব কাঁচামাল আসবে, সেগুলো যেন আমরা বিমানবন্দর থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খালাস নিতে পারি, সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সমস্যা হলো, এই মুহূর্তে আমাদের কোনো ধারণা নেই, নতুন করে আসা এসব পণ্য কোথায় সংরক্ষণ করা হবে। বিশেষ করে যেসব ওষুধ বা কাঁচামাল শীতল তাপমাত্রায় সংরক্ষণের (কোল্ড চেইন) প্রয়োজন, সেগুলোর জন্য নির্ধারিত কক্ষ পুরোপুরি পুড়ে গেছে। আমরা আশা করেছিলাম, হয়তো কিছু অংশ অক্ষত আছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুরো কোল্ডস্টোরেজই অচল হয়ে গেছে। ফলে এখন নতুন করে আসা কোল্ড চেইন পণ্যগুলো কোথায় রাখা হবে, তা নিশ্চিত না হলে বিদেশি ফরোয়ার্ডিং কোম্পানিগুলো সেসব পণ্য পাঠাবে না। কারণ এসব সংবেদনশীল পণ্য দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— এই মুহূর্তে আমাদের উৎপাদন বা সরবরাহে বড় কোনো সমস্যা না হলেও কোল্ড চেইন ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সরবরাহ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে সামনের দিনগুলোতে সংকট তৈরি হতে পারে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ শীতল তাপমাত্রায় সংরক্ষণ প্রয়োজন, এমন কাঁচামাল দ্রুত খালাসে আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। যদি সেটা বাস্তবায়ন হয়, তাহলে কিছুটা প্রভাব কমবে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, পুড়ে যাওয়া পণ্যের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, হরমোন, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ছিল। পুড়ে যাওয়া পণ্যের একটি বড় অংশ হলো নারকোটিকস বিভাগ থেকে অনুমোদন নেওয়া পণ্য। এই পণ্যগুলো আবার আনা যেমন জটিল, তেমনি সময়সাপেক্ষও। কারণ, এখানে ধাপে ধাপে অনেক ধরনের অনুমোদন নেওয়া হয়। তাই এ নিয়েও বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
সংকট এড়াতে ১৪ দাবি
বর্তমান পরিস্থিতিতে ফার্মা খাতের ঝুঁকি ও সম্ভাব্য সংকট এড়াতে এবং এ খাতের সুরক্ষায় সরকারের কাছে ১৪টি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি। এই ১৪ দাবির মধ্যে আছে– আগুনে পুড়ে যাওয়া এবং ইতোমধ্যে শুল্ক, ডিউটি, ট্যাক্স ও ভ্যাট প্রদান করা পণ্যের অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা। ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের এলসি-সংক্রান্ত ব্যাংক চার্জ ও সুদ মওকুফ। ফের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংক মার্জিন, চার্জ ও সুদ ছাড়াই সহজ শর্তে এলসি খোলার সুযোগ। ক্ষতিগ্রস্ত মালপত্রের বিপরীতে ধার্য কাস্টম ডিউটি, ভ্যাট, অগ্রিম আয়করসহ সব ধরনের চার্জ ও দণ্ড মওকুফ। ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের কারণে বিন লক না করে উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রাখতে কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ। নারকোটিকস অনুমোদিত পণ্য ফের দ্রুত আমদানির অনুমতি। ডিজিডিএ, নারকোটিকস, কাস্টমস, এনবিআর, বিমান কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে জরুরি সভা ডেকে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ।
সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন। এ সময় সমিতির সহসভাপতি সৈয়দ কায়সার কবীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।