ভারতের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) দাপুটে জয় পেয়েছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ), বিজেপি এবং আরও কয়েকটি দল মিলে থাকা এই জোট ২৪৩ সদস্যের বিধানসভায় ২০২টি আসন পেয়েছে। এর মধ্যে ৮৯টি নিয়ে বিজেপি এককভাবে সবচেয়ে বড় দল হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে আরজেডি, কংগ্রেস ও বামদলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত মহাগাঁটবন্ধন জোট এবার উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে পড়েছে।
নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে দুই দফায়। গত ৬ নভেম্বর প্রথম দফায় ১২১ আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এ দফায় ভোট পড়ে ৬৫ শতাংশের বেশি।
পরে ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হয় ১২২টি আসনে। এ দফায় ভোট পড়েছিল ৬৮ শতাংশের বেশি। দুই দফা মিলিয়ে প্রায় ৬৭ শতাংশ ভোট পড়েছে এই নির্বাচনে।
গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোটগণনা। পরে রাতে ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
ফলাফল প্রকাশের পর এক বার্তায় এনডিএ জোটকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এবারের নির্বাচনে কিছু রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘু তোষণের ফর্মুলা অনুসরণ করেছে, কিন্তু বিহারের নারী ও তরুণরা এনডিএ-কে বিজয়ী করেছে।
আগামী ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বিজেপির জয়ের প্রত্যাশা করে মোদি বলেন, গঙ্গানদী বিহার থেকে বাংলায় (পশ্চিমবঙ্গ) প্রবাহিত হয়। বিহার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিজয়ের পথ তৈরি করে দিয়েছে। বাংলার ভাইবোনদের আশ্বস্ত করছি যে আপনাদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে জঙ্গলরাজকে উপড়ে ফেলবে।
যার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুদিন আগেও সন্দেহ তৈরি হয়েছিল, সেই নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে পারেন বলেই রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। অনেকে মনে করছেন, তার প্রত্যাবর্তনের মূল চালিকাশক্তি ছিল ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’। নির্বাচনের আগের দুই মাসে এ কর্মসূচির আওতায় প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ নারীকে ১০ হাজার রুপি করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
বিহারের রাজনীতিতে লালু প্রসাদ যাদব ও নীতীশ কুমার—দুজনই সত্তরের দশকের সমাজবাদী রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ মুখ ছিলেন এবং দীর্ঘসময় পাশাপাশি রাজনৈতিক পথচলা করেছেন।
নীতীশ কুমার প্রথমবার বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন ১৯৯৫ সালে। ২০০০ সালে তিনি প্রথমবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন, যদিও কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তাকে সরে দাঁড়াতে হয়। পরে ২০০৫ সালে তিনি পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পান।
২০১৪ সালের আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। সেই নির্বাচনে তার দল মাত্র দুটি আসনেই সীমাবদ্ধ থাকে।
এরপর ২০১৭ সালে তিনি আবার এনডিএ–তে ফেরেন। ২০২২ সালে চলে যান বিরোধী মহাজোটে, কিন্তু গত বছরের জানুয়ারিতে আবারও বিজেপির সঙ্গেই জোট বাঁধেন। এবারের নির্বাচনে এনডিএ জোটের মুখ হিসেবে তিনিই নেতৃত্ব দেন এবং শেষ পর্যন্ত জোটকে বড় জয়ের দিকে নিয়ে যান।